ইট পাটকেল শেষপর্ব ২৪ - ইট পাটকেল সকল পর্বের লিংক
আজ সানভি আর লুবানার বিয়ে। আশমিন আর নূর লুবানা কে প্রস্তাব দিতেই লুবানা ইতস্তত করতে থাকে। সরাসরি না বলতে পারছিল না সে। কারণ লাবিব এখনো ছোট। তার ভাইকে রেখে সে এখনই বিয়ে করতে চায় না। তবে আশমিন আর নূর তাকে আস্বস্ত করেছে। বিয়ের পরেও সে এখানেই থাকবে। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই। ইতিউতি করে লুবানাও হ্যা করে দিয়েছে। সানভি নিঃসন্দেহে একজন ভালো ছেলে। শুধু তার সাথেই একটু আদায় কাচকলা সম্পর্ক। নূর আর আশমিন কে দেখে সে মনের জোর পেয়েছে। দা-কুমড়া সম্পর্কের পরেও তাদের মাঝে কতো ভালোবাসা। তাহলে তাদের মাঝেও ভালোবাসা হয়েই যাবে।
আরো পড়ুন : ইট পাটকেল পর্ব ১
একঘন্টার মধ্যে মেয়ের বাবা কে হাজির করে তাদের বিয়ে দিয়ে বাসায় বউ নিয়ে হাজির হয় আশমিন। সব কিছু খুলে বলে নূর কে। নূরের ইচ্ছে করলো আশমিনের মাথা টাই ফা*টিয়ে দিতে। দেখা গেলো তাতেও তার প্রেম পেয়ে যাবে। সেই ভয়ে দাতে দাত চেপে রইলো সে। যতসব পাগলের কারখানা তার বাড়িতে!
আশিয়ানের বউ সাইফা বিয়ের ধাক্কায় আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নূর তাকে আশিয়ানের রুমে বসিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই একা বড় হয়েছে।তার একজন নিজের মানুষের খুব অভাব। আপন মানুষের ভালোবাসা কি তা আমার ভাইয়া জানে না। আশা করি তুমি তা পূরোন করে দিবে। তুমি ভালোবেসে তার হাত ধরলে সে ভালোবেসে তোমাকে বুকে জরিয়ে নিবে। একটু ভালোবেসেই দেখো।ঠকবে না।
আশিয়ান বাসর ঘরে ঢুকেই সাইফা কে প্রথম প্রশ্ন করবছিল সে কাউকে ভালোবাসে কিনা?
সাইফার তখন আশিয়ানের ফাটা মাথা আবার ফা*টিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল। এখন জিজ্ঞেস করার ফি ফায়দা! ভাগ্য ভালো সে কোন সম্পর্কে ছিল না। থাকলে তো এখন ভয়ংকর ছ্যাকা খেয়ে বসে থাকতো। কিন্তু আশিয়ান কে বলল,
— আছে।তাকে আমি আর আত্মা,ফুসফুস, লিভার সব দিয়ে দিয়েছি। আমার থেকে দূরে থাকুন।
আশিয়ান ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
— হাত তো দাও নি। এবার আর আঙুল টিপে দাও।রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করতে গিয়ে আমার আঙুল ব্যথা হয়ে গেছে।
সাইফা দাতে দাত চেপে বলল,
— কবুল বলতে গিয়ে গলা ব্যথা হয় নি? আসুন গলাটাও একটু টিপে দেই।
কয়েকদিন ইদুর বিড়াল সম্পর্ক থাকলেও এখন তাদের সম্পর্ক মাখোমাখো হয়ে গেছে। তাদের প্রেম দেখে আশমিন হতাশ চোখে নূর কে দেখে। মেয়েরা ও ইদানীং তার সাথে দুশমনি শুরু করেছে। বউয়ের কাছেই ঘেষতে দেয় না।
নূরের মায়া বেগমের জন্য খারাপ লাগে। তার মেয়েকে বাচাতে গিয়েই নিজের জীবন দিতে হয়েছে তাকে। সব সময় দোয়া করে আল্লাহ যেন তার করব জীবন সুখের করে দেন। গান ছেড়ে দিয়েছে নূর। মেয়ে, বর আর অফিস সামলেই তার অবস্থা নাজেহাল। মেয়েগুলো হাটা শিখেছে। দৌড়ে দৌড়ে এদিক সেদিক চলে যায়। আশমিন সিকিউরিটি তিন গুন বাড়িয়েছে। মেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য দুইজন গভর্নেস রেখেছে। নূর সুস্থ হওয়ার পর থেকেই অফিস করা শুরু করেছে। মেয়েদের কে সাথে করেই নিয়ে যায় সে। তখন তারা সুখ পাখি কে সামলায়।
ঘরোয়া আয়োজনে সানভি আর লুবানার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আশমিন বড় আয়োজন করতে চাইলেও সানভি আর লুবানা তাকে বাধা দিয়েছে। তারা এতো জাকজমক ভাবে বিয়ে করতে চায় নি। তাদের মতামত কে সমর্থন করেছে আশমিন। বিয়ের সমস্ত আয়োজন অমি আর আশিয়ান নিজের হাতে করেছে। লুবানা কে তারা নিজের বোনের মতো দেখে। তাই বোনের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখেনি তারা। আশমিন সানভির বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। ছেলেপক্ষ হিসেবে মেয়ে পক্ষের নূর কে তার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। দুই মেয়ের মা হলেও তার আপত্তি নেই৷ বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই সে নূরের গা ঘেঁষে বসে পরলো। নূরের কানে ফিসফিস করে বলল,
— দুই তলার তিন নাম্বার রুমটা খালি আছে। বিছানা থেকে খেলনা গুলো সরিয়ে দিলেই আমরা একটা ভালো সময় কাটাতে পারবো। হবে নাকি বেয়াইন?
নূর বাকা হেসে নিজেও আশমিনের মতো ফিসফিস করে বলল,
— জ্বি অবশ্যই। বর আমার আশেপাশে নেই। যখন তখন চলে আসতে পারে। যা করার তারাতাড়ি করতে হবে। আমার বেডরুমে যাবেন নাকি অন্য কোথাও?
— আমার বউকে ও তো দেখছি না। না জানি কে পটিয়ে ফেলছে! খারাপ লোকের অভাব নেই। ভোলাভালা বউ আমার। আগে তাকে খুজে নেই। আসুন আমার সাথে। চিপায় চাপায় খুজতে হবে। (দাতে দাত চেপে)
আশমিন নূর কে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। বউ এতো সহজে পটে যাচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে গোপন বৈঠক করা দরকার।
— আরে কি করছেন? ছারুন আমাকে। নিচে কতো কাজ আছে।
— আমি ছাড়া এখন আর কোন কাজ নেই। আমার এখন বাসর বাসর ফিল হচ্ছে। একটা জম্পেশ বাসর সারতে হবে শর্টকাটে। যে কোন সময় গেড়িলা হাম*লা হতে পারে। মেয়ে গুলো আসেপাশেই আছে। তারা আসার আগে অনেক কাজ সারতে হবে। আমি কতটা প্রেশারে আছি বুঝতে পারছো? কথা বলে সময় নষ্ট করো না বউ। আসো একটা চুমু খাই।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন দরজা বন্ধ করে নূর কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
— দুই মেয়ের বাবা হয়ে গেছেন। এবার ভালো হয়ে যান। মেয়েদের বাবাদের এমন নির্লজ্জ হতে নেই মন্ত্রী সাহেব।
নূরের কথা শুনে আশমিন মুচকি হাসলো। নূরের কপালে চুমু খেয়ে নেশালো গলায় বলল,
— কিন্তু বরদের নির্লজ্জ হওয়া দোষের কিছু না বউ। আমি নির্লজ্জ না হলে তোমার আর আম্মু ডাক শোনা হতো না। সেই খুশিতে তোমার আমাকে সকাল বিকেল নিয়ম করে টেবলেটের মতো চুমু খাওয়া উচিত।
নূর ফিক করে হেসে দিলো। আশমিনের বাহুতে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
— আপনার মেয়েরা এখনি চলে আসবে। সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তো। যেতে দিন।
আশমিন কবে কার কথা শুনেছে। সে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। নূর হাজার বার নিষেধ করেও কাজ হলো না। তার সমস্ত সাজগোজ নষ্ট করে দম নিলো। ভালোবাসা গভীরতায় পৌঁছাতেই নূর আশমিনের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— পাগলামি তে লাগাম টানুন মন্ত্রী সাহেব। আবার বাবা হচ্ছেন আপনি।
থেমে গেলো আশমিন। স্থির নয়নে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। নূরের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলল,
— আমার পাগলামি সারাজীবনে ও কমবে না বউ। দ্বিতীয় বার বাবা হওয়ার খুশিতে বউকে ডাবল ভালোবাসবো। কাছে আসো।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। এই লোক এ জীবনে ভালো হবে না।
লুবানা কে সানভির রুমে দিয়ে এসেছে নূর। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছে। মেয়ে দুটো আজ খুব বিরক্ত করছে। আশমিন মেহমানদের বিদায় দিতে গিয়েছে। নূর সুখ পাখি কে সাইফা আর আশিয়ানের কাছে দিয়ে বলল,
— ওদের কিছুক্ষণ রাখো ভাইয়া। আমার ক্লান্ত লাগছে। ওদের বাবা এলে তার কাছে দিয়ে দিয়ো।
আশিয়ান চিন্তিত মুখে এসে নূরের কপালে হাত রাখলো। গা গরম হয়ে গেছে। নূরের কোল থেকে সুখ কে নিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
— জ্বর আসবে মনে হয়। ডাক্তার ডাকবো?বেশি খারাপ লাগছে তোর?
নূর মাথা নাড়িয়ে না জানালো। সাইফা পাখি কে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
— কিছুক্ষণ রেস্ট নাও আপু। আসো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসছি।
হাতে একটা ইলেক্ট্রিক শেলাই মেশিন নিয়ে বাসর ঘরে হাজির হলো সানভি। লুবানার হাতে তুলে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— এই নাও তোমার বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার সাবানা। আশা করছি আগামী বছর আমরা কয়েকটা মিল ফেক্টরির মালিক হব।
লুবানা হাই তুলে সেলাই মেশিনটা পাশে রাখলো। খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে গয়না খুলতে খুলতে বলল,
— ঠিক আছে। ততদিন আপনি নিচে এডযাস্ট করে নিন দাদু। কোটিপতি হলে আমি আজিমপুরে একটা ভালো কবরে আপনার থাকার ব্যবস্থা করে দিবো। আর কতো জিন্দা মানুষের সাথে ঘুরবেন? কবর না দিতে পারলেও ততদিনের জন্য ফ্লোর টা আপনার।
সানভি মুচকি হাসলো। লুবানা একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে। সানভি হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। ক্লান্ত লাগছে খুব। পাঞ্জাবির পকেটে হাতরে কপাল কুচকে ফেললো সানভি।আসার সময় আশমিন তার পকেটে কিছু একটা দিয়ে দিয়েছে। পকেট থেকে হাত বের করে চোখ বড় বড় করে ফেললো সে। আশমিন সত্যি সত্যি তাকে প্রোটে*কশন দিয়ে দিয়েছে। বাথরুমের দরজার শব্দ শুনে হাতের প্যাকেট জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল সে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সানভি কে অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকতে দেখে কপাল কুচকে ফেললো লুবানা। ভেজা চুল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো ‘কি হয়ে
ছে?’
সানভি মাথা নাড়িয়ে কিছুনা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মুচকি হাসলো লুবানা।সব কিছুতেই কেমন একটা ভালোলাগা মিশে আছে। আশ্চর্যজনক হলেও এই ক্যাটকেটে লোকটা কেও তার ভালো লাগছে। ভেজা টাওয়াল বারান্দায় মেলে দিয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো সে।সানভির দেয়া প্রথম স্পর্শ মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সানভি এদিক ওদিক চোখে ঘুরিয়ে লুবানা কে খুজলো। রুমে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো লুবানা সেখানেই দাড়িয়ে। ধীর পায়ে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো সানভি। লুবানা হালকা কেপে উঠলেও কিছু বললো না। সানভির থেকে লুবানা হাইটে অনেকটাই শর্ট। তাই লুবানার মাথা সানভির ঠিক বুকে গিয়ে ঠেকলো। সানভি নিজের হাতের বাধন শক্ত করে লুবানার মাথায় চুমু খেলো। সামনের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বলল,
— আজ থেকে তুমি আমার পরিবার জান। যাই কছু হোক আমার থেকে গোপন করবে না। সমস্যা যতই বড় হোক, আমরা একসাথে সমাধান করার চেষ্টা করবো। কিন্তু কোন লুকোচুরি নয়। তোমার প্রতিটি কথা আমি জানতে চাই।তা যদি একটা ফুল দেখে ভালো লাগা হয়, সেটা ও তুমি আমাকে বলবে।কাজ শেষে যখন বাসায় আসবো আমাকে সব কিছুর গল্প শোনাবে। আমাকে একটু ভালোবাসলেই হবে।এর বেশি হইলে চাই না তোমার কাছে।
লুবানা জরিয়ে ধরলো সানভি কে। মন্থর গলায় বলল,
— আপনার সব কথা আমি শুনবো।আপনি শুধু আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ হয়ে সারাজীবন থেকে যান। আমি আপনাকে আপনার স্বপ্নের মতো সাজিয়ে প্রতিটি দিন উপহার দিবো।
আচমকা লুবানা কে কোলে তুলে নিলো সানভি। রুমের দিকে যেতে যেতে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
— তাহলে বিড়াল টা মে*রেই ফেলি সাবানা। একদম লজ্জা পাবে না। আমরা আমরাই তো।
লুবানা হতভম্ব হয়ে গেলো। অসহায় চোখে সানভির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
নূরের প্রেগ্ন্যাসির পাচ মাস পেরিয়ে গেছে৷ ইদানীং শরীর খুব ক্লান্ত থাকে নূরের৷ মেয়ে গুলো এক একটা বিচ্ছু হয়েছে। সারাদিন মা*রামা*রি করে আবার নিজেরাই ভাব করে নেয়। সাইফা আর লুবানা সারাদিন দুটো কে দেখে রাখলেও রাতে তারা বাবা ছাড়া কারোর কাছে থাকে না। আশমিন আসতে দেড়ি হলে ভিডিও কল দিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না শুরু করে। আশমিন নানান কথা বলে মানানোর চেষ্টা করলেও মেয়েদের বোঝানো বৃথা। আমজাদ চৌধুরী তখন ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে গা জ্বালানো হাসি দেয়। আশমিন সব বুঝেও না বোঝার ভান করে চিন্তিত গলায় বলে,
— আমার মেয়ে গুলো তোমার মতো কিভাবে হলো আব্বু! ঠিক তোমার মতো হাড় জ্বালানো হয়েছে। দোয়া পড়ে একটা ফু দাও তো। তোমার বাতাস লাগলে কেটে যাবে।
আমজাদ চৌধুরী চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় ছেলের দিকে। মেয়ে দুটো একেবারে ঠিক করে। ওকে আরো বেশি জ্বালানো উচিত। বকতে বকতে কল কেটে দেয় সে। আশমিন লম্বা শ্বাস ছাড়ে। তার বাবা যে নাতনিদের সামলে নিবে তা সে ভালো করেই জানে। দুটোতেই তার অবস্থা নাজেহাল। আরেকটা হলে তার কি হবে! সেই চিন্তায় আশমিনের ঘুম আসে না। আশমিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এখন থেকেই নূরের থেকে দূরে দূরে থাকবে।যতই প্রেম পাক না কেন, সে বউ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। বউ দেখে উতলা হওয়ার কিছু নেই। সবারই বউ থাকে। তারও আছে, তাই বলে বছর বছর বাবা হয়ে জনসংখ্যা বাড়ানোর কোন মানে হয় না। একজন গণ্যমান্য মন্ত্রী হিসেবে এইসব কাজ তাকে মোটেও মানায় না।
বউ থেকে দূরে থাকার কথা চিন্তা করেই আশমিনের মুখটা শুকিয়ে গেল। এখন আবার বউয়ের গা ঘেঁষে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। কিছুক্ষণ আগের প্রতিজ্ঞা ভুলে আশমিন তারাতাড়ি নিজের কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলো। গিয়েই চটাশ চটাশ করে দুটো চুমু খেতে হবে। বিয়ে করলে যে সকাল বিকাল বউকে চুমু খাওয়ার চাকরি করতে হবে এটা জানলে সে জীবনেও বিয়ে করতো না। ড্রাইভার টাও চেঞ্জ করতে হবে। গাড়ি এতো ধীরে চালালে সে বাড়ি যাবে কখন! বউ না আবার ঘুমিয়ে যায়!ঘুমন্ত বউ কে চুমু খেয়ে মজা নেই। চুমু খেয়ে যদি বউয়ের ঝাড়িই না খেলো সেটা আবার কিসের চুমু?
হসপিটালের করিডরে দাড়িয়ে আছে সবাই। আজ নূরের ডেলিভারি ডেট। কিছুক্ষণ আগেই নূর কে ওটি তে নিয়ে গেছে। আশমিন বউয়ের চিন্তা করার সময় পাচ্ছে না। সুখ আর পাখি তাকে উলোট পালোট করে ফেলছে কথা বলতে বলতে। দুই হাতে দুই মেয়েকে ধরে বসে আছে আশমিন। ছেড়ে দিলেই ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে। আশিয়ান আর অমি ওটির সামনে পায়চারি করছে। সাইফা আর লুবানা সুখ পাখি কে কয়েকবার নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বসে আছে। বাবা কে পেলে তারা আর কাউকে পাত্তা দেয়না।
আশমিন অমির দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
— ওদের নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো ভাই। আমার ভালো লাগছে না।
অমি চিন্তিত মুখে সুখ পাখি কে নিয়ে বেরিয়ে গেল। মামার সাথে যেতে পেরে তাদের আনন্দের কোন শেষ নেই।
আশমিন চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে। এবার প্রেগ্ন্যাসির শুরু থেকেই নূর অসুস্থ ছিল। সে একমনে আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। নূর আর বাচ্চা দুজনের সুস্থতাই একমাত্র কাম্য।
প্রায় দেড়ঘন্টা পরে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এলো। পিছনেই নার্সের কোলে একটা বাবু। আশমিন চিন্তিত মুখে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল,
— নূর কেমন আছে ডক্টর?
— ভালো আছে স্যার।আপনি পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন। মা ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ পরেই কেবিনে দেয়া হবে। তখন দেখা করতে পারবেন।
— ধন্যবাদ ডক্টর।
— ইটস মাই জব স্যার।
ডাক্তার হাসিমুখে চলে গেলো। আশিয়ান নার্সের থেকে বাবুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই সাইফা আর লুবানা উসখুস করছে বাবুকে কোলে নেয়ার জন্য। লুবানা ভয়ে কিছু বলছে না। আর সাইফা কয়েকবার বলার পরেও আশিয়ান দেয়নি।
আশমিন আশিয়ান থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে তার কানে আজান দিল। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো ছেলের মুখের দিকে।
— ভাইয়া আমরা লাইনে আছি।
লুবানার কথা শুনে হেসে উঠলো আশমিন। বাবুকে লুবানার কোলে দিয়ে নূরের কাছে চলে গেলো। বউকে দেখার জন্য বুকটা আনচান করছে।
সানভি আর অমি সুখ পাখি কে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে প্রবেশ করলো। সানভি ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। অফিস থেকে একটা মিটিং এটেন্ড করতে গাজীপুর গিয়েছিল।আমজাদ চৌধুরী আর সে কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে। আমজাদ চৌধুরী ও এখানেই আসছে। তার গাড়ি হয়তো জ্যামে আটকা পরেছে।
— নূর কেমন আছে?
অমির অস্থির গলা শুনে তাকে জরিয়ে ধরলো আশিয়ান। উৎফুল্ল গলায় বলল,
— ভালো আছে ভাই। আমাদের ঘরে রাজপুত্র এসেছে দেখ।
অমি একপলক তাকালো সাইফার কোলে সাদা তোয়ালে পেচানো সাদা পুতুলটার দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো। সানভি লুবানার কানে ফিসফিস করে বলল,
— আমাদের ও একটা পুতুল দরকার সাবানা।
লুবানা কটমট করে তাকিয়ে চলে গেলো নূরের কেবিনে।
আশমিন নূরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূরের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আশমিন নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নূরের চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে। শুকনো ফ্যাকাশে ঠোঁট গুলোতে আলতো করে চুমু খেলো আশমিন। এখন একটু শান্তি লাগছে তার।
সুখ পাখি ভাইয়ের মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। একটু পর পর আদূরে হাতে আদর করে দিচ্ছে। নূরের জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে। সবাই নূরের সাথে দেখা করে গিয়েছে।আমজাদ চৌধুরী নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সুখ পাখি কে আশিয়ান সাথে করে নিয়ে গেছে। পাজি দুটো হাসপাতাল কে খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছে। এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে রোগীদের রুমে চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন করতে করতে অসুস্থ মানুষকে হার্ট অ্যা*টাক দেয়ার অবস্থা।
আমজাদ চৌধুরী আশমিনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— ছেলের বাবা হয়েছো। এবার ভালো হয়ে যাও।ছেলে তোমার মতো হলে কপালে দুঃখ আছে।
আশমিন বাকা চোখে তাকিয়ে দাম্ভিকের হাসি হাসলো। আমজাদ চৌধুরী কে খোচা মেরে বলল,
— আমার মতো হলে সেও তিন বাচ্চার বাপ হবে।মানুষ কে গর্ব করে বলবে আমারা তিন ভাইবোন। আমার মতো তো ভার্জিন বাপ নিয়ে ঘুরতে হবে না! থাক বাদ দাও, আমার কষ্ট তুমি বুঝবে না। কাল থেকে বৃদ্ধাশ্রমের সামনে দাড়িয়ে থাকবে। দেখো শেষকালে কাউকে পটাতে পারো কিনা!বউ কে বশে রাখার ছোটখাটো একটা ট্রেনিং আমি তোমাকে দিয়ে দিবো। সানের সাথে বাসায় যাও। কচি ছেলেদের রাত জাগতে নেই। যৌবনে ভাটা পরবে। বাসায় গিয়ে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরবে। বুঝেছো?
আমজাদ চৌধুরী তপ্ত শ্বাস ফেললো। এই ছেলের ঠোঁট দুটো সেলাই করে দেয়ার ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিয়ে বাসায় চলে গেলো।
ক্লান্ত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অমি।আশিয়ান তার পাশেই সিগারেট টানছে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
— এবার নিজের জীবন টা গুছিয়ে নে। সে নেই ভাই। থাকলে পাতাল থেকে হলেও তোর সামনে হাজির করতাম। এভাবে আর কয়দিন?
— কে বললো সে নেই।আমার এই বুকের বা পাশে সে আছে।ঠিক প্রথম দিনের মতো জীবন্ত। আমার ভালোবাসায় তাকে বেচে থাকতে দে। আর কাউকে জীবনে এনে তাকে ভুলে যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই ভাই।
— ভুলবি কেন?তাকে তার জায়গায় রাখ। যে আসবে সে তার নিজের জায়গা বানিয়ে নিবে।
আশিয়ানের কথায় মলিন হাসলো অমি। আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস গলায় বলল,
— এগুলো সব মন ভোলানো গল্প ভাই।যে জায়গাটা তার জন্য বরাদ্দ সেই জায়গা অন্য কাউকে দিলে সে কি নিজের অস্তিত্ব হারাবে না?তিক্ত হলেও এটাই সত্যি যে, একসময় সংসারের চাপে সে আমার বুকে চাপা পরে যাবে। বউ বাচ্চার কথা চিন্তা করতে গিয়ে মাসের পর মাস তাকে ভুলে থাকবো। মনে পড়বে,কোন অপ্রাপ্তি সামনে আসলে তার জন্য হৃদয় পুড়বে।তার যায়গায় যাকে বসাবো সে তার জায়গা দখল নিবে ভাই। আমি হয়তো মায়ায় পরে তা মেনেও নিবো। এই মেনে নেয়াটাতেই আমার আপত্তি। আমি স্বপ্নেও তার জায়গায় কাউকে চাইনা। তাকে ভালোবাসার জন্য তার উপস্থিতি প্রয়োজন নেই। আমার হৃদয়ে তার অস্তিত্বই যথেষ্ট।
আশিয়ান হার মেনে নিলো।অমির পিঠে হালকা চাপড় মেরে নিচে নেমে গেলো।
অমি ভেজা চোখ জোড়া বন্ধ করলো তার প্রেয়সীকে কল্পনা করার আশায়।যাকে সে হারিয়েছে ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায়। বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া প্রেয়সীর মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই ধড়ফড় করে চোখ খুলে ফেললো অমি। কি হতো যদি দুজনে জীবনটা একসাথে হাসিখুশি কাটাতে পারতো?
নূর আশমিনের হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। এ পর্যন্ত আশমিন কয়েকশ চুমু খেয়েছে তাকে। বারবার বিস্তারিত বুঝিয়েছে বউ ছাড়া সে এতিম মুরগীর বাচ্চার মতো কিভাবে ঝিম মেরে বসে ছিল।তাই তাকে এখন টপাটপ চুমু খেতে দেয়া হোক।বউ হিসেবে এটা তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। মন্ত্রীর বউ হয়ে সে দায়িত্বে অবহেলা করতে পারে না!
তাই নূর চুপ করে তার কথা শুনছে আর চিন্তা করছে এই চুমুখোর লোকটা কে নিয়ে সে কিভাবে বাকি জীবন টা কাটাবে!
সমাপ্ত।
(অবশেষে শেষ হয়েছে। অমির বিস্তারিত প্রেম কাহিনি বইয়ে পেয়ে যাবেন। তাই অভিযোগ করবেন না। লম্বা পর্ব দিয়েছি। এবার ঘুমাই।জ্বর এখনো আছে। ছেড়ে ছেড়ে আসে। আহ!কি যে যন্ত্রণা। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।)
এর মধ্যে আশিয়ান এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে। রাস্তা থেকে এক মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। তার গাড়িতেই এক্সি*ডেন্ট করেছিলো মেয়েটি। বেশি ব্যাথা না পেলেও হাত সামান্য কে*টে গিয়েছিল। তাতেই মেয়েটা রেগে রাস্তার পাশের এক বাশ দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আশিয়ান কে হসপিটালে নিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজও করিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই নাকি আশিয়ান তার প্রেমে পরে গিয়েছে। সেই মুহুর্তে মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছে আশমিনের অফিসে। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছেড়ে আশমিন বসে বসে আশিয়ানের অলৌকিক প্রেমের গল্প শুনেছে। অমি কে ভোতা মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আশমিন গম্ভীর গলায় বিয়ের আয়োজন করতে বললো। তার ভাষ্যমতে, যে তোমার মাথা ফাটিয়েছে।তুমি ও ভালোবেসে তার হৃদয় ফাটিয়ে দাও।
আরো পড়ুন : ইট পাটকেল পর্ব ১
ইট পাটকেল পর্ব ২
ইট পাটকেল পর্ব ৩
ইট পাটকেল পর্ব ৪
ইট পাটকেল পর্ব ৫
ইট পাটকেল পর্ব ৬
ইট পাটকেল পর্ব ৭
ইট পাটকেল পর্ব ৮
ইট পাটকেল পর্ব ৯
ইট পাটকেল পর্ব ১০
ইট পাটকেল পর্ব ১১
ইট পাটকেল পর্ব ১২
ইট পাটকেল পর্ব ১৩
ইট পাটকেল পর্ব ১৪
ইট পাটকেল পর্ব ১৫
ইট পাটকেল পর্ব ১৬
ইট পাটকেল পর্ব ১৭
ইট পাটকেল পর্ব ১৮
ইট পাটকেল পর্ব ১৯
ইট পাটকেল পর্ব ২০
ইট পাটকেল পর্ব ২১
ইট পাটকেল পর্ব ২২
ইট পাটকেল পর্ব ২৩
ইট পাটকেল শেষপর্ব ২৪
একঘন্টার মধ্যে মেয়ের বাবা কে হাজির করে তাদের বিয়ে দিয়ে বাসায় বউ নিয়ে হাজির হয় আশমিন। সব কিছু খুলে বলে নূর কে। নূরের ইচ্ছে করলো আশমিনের মাথা টাই ফা*টিয়ে দিতে। দেখা গেলো তাতেও তার প্রেম পেয়ে যাবে। সেই ভয়ে দাতে দাত চেপে রইলো সে। যতসব পাগলের কারখানা তার বাড়িতে!
আশিয়ানের বউ সাইফা বিয়ের ধাক্কায় আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নূর তাকে আশিয়ানের রুমে বসিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই একা বড় হয়েছে।তার একজন নিজের মানুষের খুব অভাব। আপন মানুষের ভালোবাসা কি তা আমার ভাইয়া জানে না। আশা করি তুমি তা পূরোন করে দিবে। তুমি ভালোবেসে তার হাত ধরলে সে ভালোবেসে তোমাকে বুকে জরিয়ে নিবে। একটু ভালোবেসেই দেখো।ঠকবে না।
আশিয়ান বাসর ঘরে ঢুকেই সাইফা কে প্রথম প্রশ্ন করবছিল সে কাউকে ভালোবাসে কিনা?
সাইফার তখন আশিয়ানের ফাটা মাথা আবার ফা*টিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল। এখন জিজ্ঞেস করার ফি ফায়দা! ভাগ্য ভালো সে কোন সম্পর্কে ছিল না। থাকলে তো এখন ভয়ংকর ছ্যাকা খেয়ে বসে থাকতো। কিন্তু আশিয়ান কে বলল,
— আছে।তাকে আমি আর আত্মা,ফুসফুস, লিভার সব দিয়ে দিয়েছি। আমার থেকে দূরে থাকুন।
আশিয়ান ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
— হাত তো দাও নি। এবার আর আঙুল টিপে দাও।রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করতে গিয়ে আমার আঙুল ব্যথা হয়ে গেছে।
সাইফা দাতে দাত চেপে বলল,
— কবুল বলতে গিয়ে গলা ব্যথা হয় নি? আসুন গলাটাও একটু টিপে দেই।
কয়েকদিন ইদুর বিড়াল সম্পর্ক থাকলেও এখন তাদের সম্পর্ক মাখোমাখো হয়ে গেছে। তাদের প্রেম দেখে আশমিন হতাশ চোখে নূর কে দেখে। মেয়েরা ও ইদানীং তার সাথে দুশমনি শুরু করেছে। বউয়ের কাছেই ঘেষতে দেয় না।
নূরের মায়া বেগমের জন্য খারাপ লাগে। তার মেয়েকে বাচাতে গিয়েই নিজের জীবন দিতে হয়েছে তাকে। সব সময় দোয়া করে আল্লাহ যেন তার করব জীবন সুখের করে দেন। গান ছেড়ে দিয়েছে নূর। মেয়ে, বর আর অফিস সামলেই তার অবস্থা নাজেহাল। মেয়েগুলো হাটা শিখেছে। দৌড়ে দৌড়ে এদিক সেদিক চলে যায়। আশমিন সিকিউরিটি তিন গুন বাড়িয়েছে। মেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য দুইজন গভর্নেস রেখেছে। নূর সুস্থ হওয়ার পর থেকেই অফিস করা শুরু করেছে। মেয়েদের কে সাথে করেই নিয়ে যায় সে। তখন তারা সুখ পাখি কে সামলায়।
ঘরোয়া আয়োজনে সানভি আর লুবানার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আশমিন বড় আয়োজন করতে চাইলেও সানভি আর লুবানা তাকে বাধা দিয়েছে। তারা এতো জাকজমক ভাবে বিয়ে করতে চায় নি। তাদের মতামত কে সমর্থন করেছে আশমিন। বিয়ের সমস্ত আয়োজন অমি আর আশিয়ান নিজের হাতে করেছে। লুবানা কে তারা নিজের বোনের মতো দেখে। তাই বোনের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখেনি তারা। আশমিন সানভির বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। ছেলেপক্ষ হিসেবে মেয়ে পক্ষের নূর কে তার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। দুই মেয়ের মা হলেও তার আপত্তি নেই৷ বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই সে নূরের গা ঘেঁষে বসে পরলো। নূরের কানে ফিসফিস করে বলল,
— দুই তলার তিন নাম্বার রুমটা খালি আছে। বিছানা থেকে খেলনা গুলো সরিয়ে দিলেই আমরা একটা ভালো সময় কাটাতে পারবো। হবে নাকি বেয়াইন?
নূর বাকা হেসে নিজেও আশমিনের মতো ফিসফিস করে বলল,
— জ্বি অবশ্যই। বর আমার আশেপাশে নেই। যখন তখন চলে আসতে পারে। যা করার তারাতাড়ি করতে হবে। আমার বেডরুমে যাবেন নাকি অন্য কোথাও?
— আমার বউকে ও তো দেখছি না। না জানি কে পটিয়ে ফেলছে! খারাপ লোকের অভাব নেই। ভোলাভালা বউ আমার। আগে তাকে খুজে নেই। আসুন আমার সাথে। চিপায় চাপায় খুজতে হবে। (দাতে দাত চেপে)
আশমিন নূর কে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। বউ এতো সহজে পটে যাচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে গোপন বৈঠক করা দরকার।
— আরে কি করছেন? ছারুন আমাকে। নিচে কতো কাজ আছে।
— আমি ছাড়া এখন আর কোন কাজ নেই। আমার এখন বাসর বাসর ফিল হচ্ছে। একটা জম্পেশ বাসর সারতে হবে শর্টকাটে। যে কোন সময় গেড়িলা হাম*লা হতে পারে। মেয়ে গুলো আসেপাশেই আছে। তারা আসার আগে অনেক কাজ সারতে হবে। আমি কতটা প্রেশারে আছি বুঝতে পারছো? কথা বলে সময় নষ্ট করো না বউ। আসো একটা চুমু খাই।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন দরজা বন্ধ করে নূর কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
— দুই মেয়ের বাবা হয়ে গেছেন। এবার ভালো হয়ে যান। মেয়েদের বাবাদের এমন নির্লজ্জ হতে নেই মন্ত্রী সাহেব।
নূরের কথা শুনে আশমিন মুচকি হাসলো। নূরের কপালে চুমু খেয়ে নেশালো গলায় বলল,
— কিন্তু বরদের নির্লজ্জ হওয়া দোষের কিছু না বউ। আমি নির্লজ্জ না হলে তোমার আর আম্মু ডাক শোনা হতো না। সেই খুশিতে তোমার আমাকে সকাল বিকেল নিয়ম করে টেবলেটের মতো চুমু খাওয়া উচিত।
নূর ফিক করে হেসে দিলো। আশমিনের বাহুতে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
— আপনার মেয়েরা এখনি চলে আসবে। সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তো। যেতে দিন।
আশমিন কবে কার কথা শুনেছে। সে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। নূর হাজার বার নিষেধ করেও কাজ হলো না। তার সমস্ত সাজগোজ নষ্ট করে দম নিলো। ভালোবাসা গভীরতায় পৌঁছাতেই নূর আশমিনের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— পাগলামি তে লাগাম টানুন মন্ত্রী সাহেব। আবার বাবা হচ্ছেন আপনি।
থেমে গেলো আশমিন। স্থির নয়নে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। নূরের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলল,
— আমার পাগলামি সারাজীবনে ও কমবে না বউ। দ্বিতীয় বার বাবা হওয়ার খুশিতে বউকে ডাবল ভালোবাসবো। কাছে আসো।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। এই লোক এ জীবনে ভালো হবে না।
লুবানা কে সানভির রুমে দিয়ে এসেছে নূর। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছে। মেয়ে দুটো আজ খুব বিরক্ত করছে। আশমিন মেহমানদের বিদায় দিতে গিয়েছে। নূর সুখ পাখি কে সাইফা আর আশিয়ানের কাছে দিয়ে বলল,
— ওদের কিছুক্ষণ রাখো ভাইয়া। আমার ক্লান্ত লাগছে। ওদের বাবা এলে তার কাছে দিয়ে দিয়ো।
আশিয়ান চিন্তিত মুখে এসে নূরের কপালে হাত রাখলো। গা গরম হয়ে গেছে। নূরের কোল থেকে সুখ কে নিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
— জ্বর আসবে মনে হয়। ডাক্তার ডাকবো?বেশি খারাপ লাগছে তোর?
নূর মাথা নাড়িয়ে না জানালো। সাইফা পাখি কে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
— কিছুক্ষণ রেস্ট নাও আপু। আসো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসছি।
হাতে একটা ইলেক্ট্রিক শেলাই মেশিন নিয়ে বাসর ঘরে হাজির হলো সানভি। লুবানার হাতে তুলে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— এই নাও তোমার বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার সাবানা। আশা করছি আগামী বছর আমরা কয়েকটা মিল ফেক্টরির মালিক হব।
লুবানা হাই তুলে সেলাই মেশিনটা পাশে রাখলো। খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে গয়না খুলতে খুলতে বলল,
— ঠিক আছে। ততদিন আপনি নিচে এডযাস্ট করে নিন দাদু। কোটিপতি হলে আমি আজিমপুরে একটা ভালো কবরে আপনার থাকার ব্যবস্থা করে দিবো। আর কতো জিন্দা মানুষের সাথে ঘুরবেন? কবর না দিতে পারলেও ততদিনের জন্য ফ্লোর টা আপনার।
সানভি মুচকি হাসলো। লুবানা একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে। সানভি হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। ক্লান্ত লাগছে খুব। পাঞ্জাবির পকেটে হাতরে কপাল কুচকে ফেললো সানভি।আসার সময় আশমিন তার পকেটে কিছু একটা দিয়ে দিয়েছে। পকেট থেকে হাত বের করে চোখ বড় বড় করে ফেললো সে। আশমিন সত্যি সত্যি তাকে প্রোটে*কশন দিয়ে দিয়েছে। বাথরুমের দরজার শব্দ শুনে হাতের প্যাকেট জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল সে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সানভি কে অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকতে দেখে কপাল কুচকে ফেললো লুবানা। ভেজা চুল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো ‘কি হয়ে
ছে?’
সানভি মাথা নাড়িয়ে কিছুনা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মুচকি হাসলো লুবানা।সব কিছুতেই কেমন একটা ভালোলাগা মিশে আছে। আশ্চর্যজনক হলেও এই ক্যাটকেটে লোকটা কেও তার ভালো লাগছে। ভেজা টাওয়াল বারান্দায় মেলে দিয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো সে।সানভির দেয়া প্রথম স্পর্শ মনে পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সানভি এদিক ওদিক চোখে ঘুরিয়ে লুবানা কে খুজলো। রুমে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো লুবানা সেখানেই দাড়িয়ে। ধীর পায়ে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো সানভি। লুবানা হালকা কেপে উঠলেও কিছু বললো না। সানভির থেকে লুবানা হাইটে অনেকটাই শর্ট। তাই লুবানার মাথা সানভির ঠিক বুকে গিয়ে ঠেকলো। সানভি নিজের হাতের বাধন শক্ত করে লুবানার মাথায় চুমু খেলো। সামনের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বলল,
— আজ থেকে তুমি আমার পরিবার জান। যাই কছু হোক আমার থেকে গোপন করবে না। সমস্যা যতই বড় হোক, আমরা একসাথে সমাধান করার চেষ্টা করবো। কিন্তু কোন লুকোচুরি নয়। তোমার প্রতিটি কথা আমি জানতে চাই।তা যদি একটা ফুল দেখে ভালো লাগা হয়, সেটা ও তুমি আমাকে বলবে।কাজ শেষে যখন বাসায় আসবো আমাকে সব কিছুর গল্প শোনাবে। আমাকে একটু ভালোবাসলেই হবে।এর বেশি হইলে চাই না তোমার কাছে।
লুবানা জরিয়ে ধরলো সানভি কে। মন্থর গলায় বলল,
— আপনার সব কথা আমি শুনবো।আপনি শুধু আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ হয়ে সারাজীবন থেকে যান। আমি আপনাকে আপনার স্বপ্নের মতো সাজিয়ে প্রতিটি দিন উপহার দিবো।
আচমকা লুবানা কে কোলে তুলে নিলো সানভি। রুমের দিকে যেতে যেতে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
— তাহলে বিড়াল টা মে*রেই ফেলি সাবানা। একদম লজ্জা পাবে না। আমরা আমরাই তো।
লুবানা হতভম্ব হয়ে গেলো। অসহায় চোখে সানভির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
নূরের প্রেগ্ন্যাসির পাচ মাস পেরিয়ে গেছে৷ ইদানীং শরীর খুব ক্লান্ত থাকে নূরের৷ মেয়ে গুলো এক একটা বিচ্ছু হয়েছে। সারাদিন মা*রামা*রি করে আবার নিজেরাই ভাব করে নেয়। সাইফা আর লুবানা সারাদিন দুটো কে দেখে রাখলেও রাতে তারা বাবা ছাড়া কারোর কাছে থাকে না। আশমিন আসতে দেড়ি হলে ভিডিও কল দিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না শুরু করে। আশমিন নানান কথা বলে মানানোর চেষ্টা করলেও মেয়েদের বোঝানো বৃথা। আমজাদ চৌধুরী তখন ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে গা জ্বালানো হাসি দেয়। আশমিন সব বুঝেও না বোঝার ভান করে চিন্তিত গলায় বলে,
— আমার মেয়ে গুলো তোমার মতো কিভাবে হলো আব্বু! ঠিক তোমার মতো হাড় জ্বালানো হয়েছে। দোয়া পড়ে একটা ফু দাও তো। তোমার বাতাস লাগলে কেটে যাবে।
আমজাদ চৌধুরী চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় ছেলের দিকে। মেয়ে দুটো একেবারে ঠিক করে। ওকে আরো বেশি জ্বালানো উচিত। বকতে বকতে কল কেটে দেয় সে। আশমিন লম্বা শ্বাস ছাড়ে। তার বাবা যে নাতনিদের সামলে নিবে তা সে ভালো করেই জানে। দুটোতেই তার অবস্থা নাজেহাল। আরেকটা হলে তার কি হবে! সেই চিন্তায় আশমিনের ঘুম আসে না। আশমিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এখন থেকেই নূরের থেকে দূরে দূরে থাকবে।যতই প্রেম পাক না কেন, সে বউ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। বউ দেখে উতলা হওয়ার কিছু নেই। সবারই বউ থাকে। তারও আছে, তাই বলে বছর বছর বাবা হয়ে জনসংখ্যা বাড়ানোর কোন মানে হয় না। একজন গণ্যমান্য মন্ত্রী হিসেবে এইসব কাজ তাকে মোটেও মানায় না।
বউ থেকে দূরে থাকার কথা চিন্তা করেই আশমিনের মুখটা শুকিয়ে গেল। এখন আবার বউয়ের গা ঘেঁষে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। কিছুক্ষণ আগের প্রতিজ্ঞা ভুলে আশমিন তারাতাড়ি নিজের কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলো। গিয়েই চটাশ চটাশ করে দুটো চুমু খেতে হবে। বিয়ে করলে যে সকাল বিকাল বউকে চুমু খাওয়ার চাকরি করতে হবে এটা জানলে সে জীবনেও বিয়ে করতো না। ড্রাইভার টাও চেঞ্জ করতে হবে। গাড়ি এতো ধীরে চালালে সে বাড়ি যাবে কখন! বউ না আবার ঘুমিয়ে যায়!ঘুমন্ত বউ কে চুমু খেয়ে মজা নেই। চুমু খেয়ে যদি বউয়ের ঝাড়িই না খেলো সেটা আবার কিসের চুমু?
হসপিটালের করিডরে দাড়িয়ে আছে সবাই। আজ নূরের ডেলিভারি ডেট। কিছুক্ষণ আগেই নূর কে ওটি তে নিয়ে গেছে। আশমিন বউয়ের চিন্তা করার সময় পাচ্ছে না। সুখ আর পাখি তাকে উলোট পালোট করে ফেলছে কথা বলতে বলতে। দুই হাতে দুই মেয়েকে ধরে বসে আছে আশমিন। ছেড়ে দিলেই ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে। আশিয়ান আর অমি ওটির সামনে পায়চারি করছে। সাইফা আর লুবানা সুখ পাখি কে কয়েকবার নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বসে আছে। বাবা কে পেলে তারা আর কাউকে পাত্তা দেয়না।
আশমিন অমির দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
— ওদের নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো ভাই। আমার ভালো লাগছে না।
অমি চিন্তিত মুখে সুখ পাখি কে নিয়ে বেরিয়ে গেল। মামার সাথে যেতে পেরে তাদের আনন্দের কোন শেষ নেই।
আশমিন চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে। এবার প্রেগ্ন্যাসির শুরু থেকেই নূর অসুস্থ ছিল। সে একমনে আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। নূর আর বাচ্চা দুজনের সুস্থতাই একমাত্র কাম্য।
প্রায় দেড়ঘন্টা পরে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এলো। পিছনেই নার্সের কোলে একটা বাবু। আশমিন চিন্তিত মুখে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল,
— নূর কেমন আছে ডক্টর?
— ভালো আছে স্যার।আপনি পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন। মা ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ পরেই কেবিনে দেয়া হবে। তখন দেখা করতে পারবেন।
— ধন্যবাদ ডক্টর।
— ইটস মাই জব স্যার।
ডাক্তার হাসিমুখে চলে গেলো। আশিয়ান নার্সের থেকে বাবুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই সাইফা আর লুবানা উসখুস করছে বাবুকে কোলে নেয়ার জন্য। লুবানা ভয়ে কিছু বলছে না। আর সাইফা কয়েকবার বলার পরেও আশিয়ান দেয়নি।
আশমিন আশিয়ান থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে তার কানে আজান দিল। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো ছেলের মুখের দিকে।
— ভাইয়া আমরা লাইনে আছি।
লুবানার কথা শুনে হেসে উঠলো আশমিন। বাবুকে লুবানার কোলে দিয়ে নূরের কাছে চলে গেলো। বউকে দেখার জন্য বুকটা আনচান করছে।
সানভি আর অমি সুখ পাখি কে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে প্রবেশ করলো। সানভি ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। অফিস থেকে একটা মিটিং এটেন্ড করতে গাজীপুর গিয়েছিল।আমজাদ চৌধুরী আর সে কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে। আমজাদ চৌধুরী ও এখানেই আসছে। তার গাড়ি হয়তো জ্যামে আটকা পরেছে।
— নূর কেমন আছে?
অমির অস্থির গলা শুনে তাকে জরিয়ে ধরলো আশিয়ান। উৎফুল্ল গলায় বলল,
— ভালো আছে ভাই। আমাদের ঘরে রাজপুত্র এসেছে দেখ।
অমি একপলক তাকালো সাইফার কোলে সাদা তোয়ালে পেচানো সাদা পুতুলটার দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো। সানভি লুবানার কানে ফিসফিস করে বলল,
— আমাদের ও একটা পুতুল দরকার সাবানা।
লুবানা কটমট করে তাকিয়ে চলে গেলো নূরের কেবিনে।
আশমিন নূরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূরের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। আশমিন নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নূরের চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে। শুকনো ফ্যাকাশে ঠোঁট গুলোতে আলতো করে চুমু খেলো আশমিন। এখন একটু শান্তি লাগছে তার।
সুখ পাখি ভাইয়ের মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। একটু পর পর আদূরে হাতে আদর করে দিচ্ছে। নূরের জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে। সবাই নূরের সাথে দেখা করে গিয়েছে।আমজাদ চৌধুরী নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সুখ পাখি কে আশিয়ান সাথে করে নিয়ে গেছে। পাজি দুটো হাসপাতাল কে খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছে। এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে রোগীদের রুমে চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন করতে করতে অসুস্থ মানুষকে হার্ট অ্যা*টাক দেয়ার অবস্থা।
আমজাদ চৌধুরী আশমিনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— ছেলের বাবা হয়েছো। এবার ভালো হয়ে যাও।ছেলে তোমার মতো হলে কপালে দুঃখ আছে।
আশমিন বাকা চোখে তাকিয়ে দাম্ভিকের হাসি হাসলো। আমজাদ চৌধুরী কে খোচা মেরে বলল,
— আমার মতো হলে সেও তিন বাচ্চার বাপ হবে।মানুষ কে গর্ব করে বলবে আমারা তিন ভাইবোন। আমার মতো তো ভার্জিন বাপ নিয়ে ঘুরতে হবে না! থাক বাদ দাও, আমার কষ্ট তুমি বুঝবে না। কাল থেকে বৃদ্ধাশ্রমের সামনে দাড়িয়ে থাকবে। দেখো শেষকালে কাউকে পটাতে পারো কিনা!বউ কে বশে রাখার ছোটখাটো একটা ট্রেনিং আমি তোমাকে দিয়ে দিবো। সানের সাথে বাসায় যাও। কচি ছেলেদের রাত জাগতে নেই। যৌবনে ভাটা পরবে। বাসায় গিয়ে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরবে। বুঝেছো?
আমজাদ চৌধুরী তপ্ত শ্বাস ফেললো। এই ছেলের ঠোঁট দুটো সেলাই করে দেয়ার ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিয়ে বাসায় চলে গেলো।
ক্লান্ত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অমি।আশিয়ান তার পাশেই সিগারেট টানছে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
— এবার নিজের জীবন টা গুছিয়ে নে। সে নেই ভাই। থাকলে পাতাল থেকে হলেও তোর সামনে হাজির করতাম। এভাবে আর কয়দিন?
— কে বললো সে নেই।আমার এই বুকের বা পাশে সে আছে।ঠিক প্রথম দিনের মতো জীবন্ত। আমার ভালোবাসায় তাকে বেচে থাকতে দে। আর কাউকে জীবনে এনে তাকে ভুলে যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই ভাই।
— ভুলবি কেন?তাকে তার জায়গায় রাখ। যে আসবে সে তার নিজের জায়গা বানিয়ে নিবে।
আশিয়ানের কথায় মলিন হাসলো অমি। আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস গলায় বলল,
— এগুলো সব মন ভোলানো গল্প ভাই।যে জায়গাটা তার জন্য বরাদ্দ সেই জায়গা অন্য কাউকে দিলে সে কি নিজের অস্তিত্ব হারাবে না?তিক্ত হলেও এটাই সত্যি যে, একসময় সংসারের চাপে সে আমার বুকে চাপা পরে যাবে। বউ বাচ্চার কথা চিন্তা করতে গিয়ে মাসের পর মাস তাকে ভুলে থাকবো। মনে পড়বে,কোন অপ্রাপ্তি সামনে আসলে তার জন্য হৃদয় পুড়বে।তার যায়গায় যাকে বসাবো সে তার জায়গা দখল নিবে ভাই। আমি হয়তো মায়ায় পরে তা মেনেও নিবো। এই মেনে নেয়াটাতেই আমার আপত্তি। আমি স্বপ্নেও তার জায়গায় কাউকে চাইনা। তাকে ভালোবাসার জন্য তার উপস্থিতি প্রয়োজন নেই। আমার হৃদয়ে তার অস্তিত্বই যথেষ্ট।
আশিয়ান হার মেনে নিলো।অমির পিঠে হালকা চাপড় মেরে নিচে নেমে গেলো।
অমি ভেজা চোখ জোড়া বন্ধ করলো তার প্রেয়সীকে কল্পনা করার আশায়।যাকে সে হারিয়েছে ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায়। বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া প্রেয়সীর মুখটা চোখে ভেসে উঠতেই ধড়ফড় করে চোখ খুলে ফেললো অমি। কি হতো যদি দুজনে জীবনটা একসাথে হাসিখুশি কাটাতে পারতো?
নূর আশমিনের হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। এ পর্যন্ত আশমিন কয়েকশ চুমু খেয়েছে তাকে। বারবার বিস্তারিত বুঝিয়েছে বউ ছাড়া সে এতিম মুরগীর বাচ্চার মতো কিভাবে ঝিম মেরে বসে ছিল।তাই তাকে এখন টপাটপ চুমু খেতে দেয়া হোক।বউ হিসেবে এটা তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। মন্ত্রীর বউ হয়ে সে দায়িত্বে অবহেলা করতে পারে না!
তাই নূর চুপ করে তার কথা শুনছে আর চিন্তা করছে এই চুমুখোর লোকটা কে নিয়ে সে কিভাবে বাকি জীবন টা কাটাবে!
সমাপ্ত।
(অবশেষে শেষ হয়েছে। অমির বিস্তারিত প্রেম কাহিনি বইয়ে পেয়ে যাবেন। তাই অভিযোগ করবেন না। লম্বা পর্ব দিয়েছি। এবার ঘুমাই।জ্বর এখনো আছে। ছেড়ে ছেড়ে আসে। আহ!কি যে যন্ত্রণা। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।)
আমার জীবন বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url