পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি - পবিত্রতা সম্পর্কে আলোচনা
আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জানবো যে,পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি যেমন: "পবিত্রতার বিবরণ ও অপবিত্র হওয়ার কারণসমূহ", "নাজাসাতে গলীজা ও খফীফা, অপবিত্রা দূরীকরণের নিয়ম", "পবিত্র অপবিত্রের মাসায়েল ও পাক নাপাকের মাসায়েল", "পায়খানা-প্রস্রাবের বর্ণনা", "এস্তেঞ্জার পদ্ধতি ও যে বস্তু দিয়ে কুলুখ জায়েজ ও নাজায়েজ", "কুলুখ ব্যবহারের নিয়ম পদ্ধতি", "হায়েযের বর্ণনা ও হায়েযের কতিপয় মাসায়েল", "নিফাসের বর্ণনা ও নিফাসের কতিপয় মাসায়েল", "হায়েয নিফাসকালে নিষিদ্ধ কাজসমূহ", "ওযুর বর্ণনা, প্রকারভেদ ও ফরয, সুন্নত, মোস্তাহাবসমূহ", "ওযু করার নিয়ম ও ওযুর দোয়াসমূহ", "ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ্ ও ওযূর মাকরূহসমূহ", "গোসলের বর্ণনা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব গোসল", "যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা ওয়াজিব ও সুন্নত", "গোসলের কতিপয় মাসায়েল ও ফরয গোসলের নিয়ত", "তায়াম্মুমের বিবরণ ও তায়াম্মুম করা কখন জায়েয", "যে বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়, তায়াম্মুমের ফরয, সুন্নত", "তায়াম্মুম ভঙ্গ হবার কারণ ও তায়াম্মুমের কতিপয় মাসায়েল" এই সব পবিত্রতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
তো চলুন আমরা এক এক করে দেখে আসি, পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি এবং আমরা আরো এই পবিত্রতা সম্পর্কে আলোচনা করেও বলবো পরিত্রতা অর্জন এর গুরুত্ব ও ফজীলত।
পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি
আমরা দুই ভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি-
ক. অযুর মাধ্যমে;
খ. গোসলের মাধ্যমে ও
গ. তায়াম্মুমের মাধ্যমে
ওযুর বর্ণনা, প্রকারভেদ ও ফরয, সুন্নত, মোস্তাহাবসমূহ
ওযুর বর্ণনা
পবিত্রতা হাসিলের জন্য ওযুই শ্রেষ্ঠ এবং শেষ পন্থা। কারণ, ওযু করেই অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ ইবাদাত নামায আদায়, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত এবং অন্যান্য সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে হয়। বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর সর্বদা পাক পবিত্র হয়ে থাকা একান্ত কর্তব্য। কারণ, পাক পবিত্র থাকা ইবাদাতের মাঝে গণ্য, শয়তানের ধোঁকা ও ফেরেববাজী থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এতে প্রত্যেক মুসলমানের মন প্রাণ আল্লাহর ভয়ে সচেতন থাকে এবং তার বেহেস্ত গমনের পথ প্রশস্ত করে এবং দোজখের ভীষণ অগ্নির আক্রমণ হতে হিফাজত করে। পাক পবিত্রতার সাথে মৃত্যু হলে ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। কারণ, মৃত্যুকালে শয়তান প্রবঞ্চনা দিতে তার নিকট আসতে পারে না। যারা সর্বক্ষণ পাক পবিত্র থাকতে অভ্যস্ত নয় দ্বিতীয়তঃ এতে ততটা আগ্রহীও নয়, তারা শয়তানের ধোঁকা থেকে কিছুতেই রেহাই পায় না। তবে আল্লাহ যাদের বিশেষ অনুগ্রহ করেন এবং তার করুণার দৃষ্টি রাখেন, তারা হয়তো বা রেহাই পেতে পারেন। অন্যথায় তারা কিছুতেই সৎপথের দিশারী এবং নেক আমল করতে সমর্থবান হয় না। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় এবং তাদের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকার পদধ্বনি। অতএব, প্রত্যেক মুসলমান ও দ্বীনদার লোকদের অবশ্য কর্তব্য যে, নামাযের সময় ব্যতীত এবং তা আদায়ের কারণ ছাড়াও সর্বদা পবিত্রতার সাথে থাকা। বিশেষ করে জান্নাত প্রত্যাশীদের জন্য এটা করা একান্ত আবশ্যক।
ওযুর প্রকারভেদ
ওযু তিন প্রকার- ১. ফরজ ২. ওয়াজিব ও ৩. মুস্তাহাব।
(ক) কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা/পড়া ও নামায পড়ার জন্য ওযু করা করা ফরয।
(খ) কাবা শরীফ তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা ওয়াজিব।
(গ) আট সময় ওযু করা মুস্তাহাব। যথাঃ
(ক) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে,
(খ) ওযু থাকা সত্বেও ওযু করা,
(গ) ওযু ভঙ্গ হওয়া মাত্র ওযু করা,
(ঘ) মিথ্যা বলার পর ওযু করা,
(ঙ) গিবত বলার পর ওযু করা,
(চ) অশ্লীল গান গাওয়ার পর ওযু করা,
(ছ) নামাযের বাহিরে উচ্চস্বরে হাসিবার পর ওযু করা,
(জ) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে যাওয়ার পূর্বে ওষু করা। (হালবীয়ে কবীর)
ওযুর ফরজসমূহ
মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মহান আল্লাহ্ তা'য়ালা তার বান্দাদেরকে হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের পাশা পাশি বাহ্যিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হিসেবে ওযুর বিধানাবলী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
নামায যেহেতু শ্রেষ্ঠ ইবাদাত, সেহেতু আল্লাহ্ তা'য়ালা বান্দাহকে উত্তম রূপে পবিত্রতা লাভ করার নিয়মাবলী বর্ণনা করে দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতের আলোকে ওযুর ৪টি ফরয নিম্নে দেয়া হলো। যথাঃ
১। সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল ভালভাবে ধৌত করা। অর্থাৎ কপালের উপরিভাগের চুল গজানোর স্থান হতে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করা।
২। কনুইসহ দু'হাত ভালভাবে ধৌত করা।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
৪। দু'পায়ের ছোট গিরাসহ ধৌত করা।
ওযুর সুন্নাতসমূহ
১। নিয়ত করা।
২। বিছমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা।
৩। হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
৪। উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৫। মিসওয়াক করা।
৬। তিনবার কূলি করা।
৭। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
৮। সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল তিনবার ধৌত করা এবং ঘন দাড়ি খিলাল করা
৯। উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করা।
১০। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১। উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২। টাখনু পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধৌত করা।
১৩। পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
১৪। এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
১৫। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযুর কাজগুলো সম্পূর্ণ করা। প্রথমে ডান দিকের অঙ্গ ধোয়া তারপর বাম দিকের। অজুর শেষে মসনুন ধোয়া পড়া।
ওযুর মুস্তাহাবসমূহ
১। ওযু করার সময় কেবলামুখি হয়ে বসা।
২। নিচু স্থান অপেক্ষা একটু উঁচু স্থানে বসা।
৩। ডান দিক হতে ওযু আরম্ভ করা।
৪। ওযুতে অন্য কোন লোকের সাহায্য না নেয়া।
৫। নামাযের সময় হওয়ার পূর্বে ওযু করা।
৬। ওযুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
৭। ওযু করার সময় কথা না বলা।
৮। বাম হাত দ্বারা নাসিকা পরিষ্কার করা।
৯। ঘাড় মাসেহ করা।
১০। উভয় কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করা।
১১। ওযুর অঙ্গসমূহ ভালভাবে ধৌত করা।
১২। আংটি, গহনা নেড়ে-ছেড়ে উক্ত স্থান ভিজিয়ে দেয়া।
১৩। প্রয়োজনের অতিরক্ত পানি খরচ না করে মধ্যম পরিমাণ পানি খরচ করা।
১৪। উভয় পা বাম হাত দ্বারা ধৌত করা।
১৫। ওযুর শেষে কালেমায় শাহাদাৎ পাঠ করা।
১৬। তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায আদায় করা।
ওযু করার নিয়ম ও ওষুর দোয়াসমূহ
ওযু করার নিয়ম
প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ প্রথমে বাম হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে। হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে। কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিষ্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নাড়া-চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নত।
> দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরজ। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরজ নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
কনুইসহ হাত ধোয়াঃ উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরজ, তিনবার ধোয়া সুন্নত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে।
> কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, তাহলে খিলাল করা ওয়াজিব।
মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরজ, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নত। মাথা মাসেহের নিয়মঃ
> বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নত।
গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে পা ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
ওযুর দোয়াসমুহ
পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে অজু। নামাজের জন্য অজুকে আল্লাহ তা'আলা ফরজ করেছেন। অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। যা তুলে ধরা হলো-
১। শুরুতেই মনে মনে নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে অজু শুরু করা।
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
অর্থঃ পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। (বুখারী, হাদিসঃ ১, তিরমিজি, হাদিসঃ ২৫)
২। অজুর শেষে কালিমা শাহাদাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪১)
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِ يُكَلَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণঃ আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ্।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নাই। তিনি এক। তাঁর কোন অংশীদার নাই, এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল। (মুসলিম, হাদিসঃ ৪৪২)
৩। তারপর এ দোয়াটি পড়া-
وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাঝআলনি মিনাত তাউয়্যাবিনা ওয়াঝআলনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নিন। (তিরমিজি, হাদিসঃ ৫৫)
সুতরাং আল্লাহ তাআলা অজুর সময় উক্ত দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে দুনিয়াতে উত্তম রিযিক, মৃত্যুর পূর্বে গোনাহ মাফ এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করার তাওফিক দান করুন।
ওযুতে সন্দেহ হলে
ওযু করবার সময় অঙ্গবিশেষ ধৌত করা হয়েছে কিনা এরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হলে এবং ইহা যদি প্রথম সন্দেহ হয় তবে উক্ত অঙ্গ পুনরায় ধৌত করা উচিত। কিন্তু সর্বদা যদি এরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হয় অথবা ওযু শেষ হওয়ার পর সৃষ্টি হয়, তবে তৎপ্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে নেই। ওযু শেষ হওয়ার পর ওযু ভঙ্গ হয়েছে বলে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ওযু থাকবে কিন্তু ওযু না থাকা অবস্থায় ওযু করা হয়েছে বলে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ওযু করতে হবে। (নুরুল ইজাহ, তাহবী)
ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ্ ও ওযূর মাকরূহসমূহ
ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ
যে সব কারণে ওজু ভঙ্গ হয় বা নষ্ট হয় তা হলো-
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।
২. দেহের কোনো অংশ থেকে রক্ত, পুঁজ বের হয়ে যদি পবিত্র হওয়ার বিধান প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ গড়িয়ে পড়ে।
৩. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে।
৪. নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে।
৫. ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে।
৬. অজ্ঞান হওয়ার পর; এমন অজ্ঞান যাতে বোধ শক্তি লোপ পায়।
৭. অপ্রকৃতিস্থতা। যা ঘুম বা নিদ্রার চেয়েও প্রবল।
৮. রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্ট হাসি; তবে জানাজা নামাজে, তিলাওয়াতে সিজদায় এবং নামাজের বাইরে হাসলে অযু নষ্ট হবে না।
৯. পিছনের রাস্তা দিয়ে অর্থাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে কীট বের হলে পবিত্রতা অর্জন তথা অযু করতে হবে। ১০. ফোঁড়া বা ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে
যদি পানি বা পুঁজ বের হয়ে ফোঁড়া বা ফোস্কার মুখ অতিক্রম করে তাহলে পবিত্র নষ্ট হবে।
১১. পুরুষ ও মহিলার গুপ্তাঙ্গ কোনো অন্তরায় ব্যতিত একত্রিত হলে; বীর্যপাত হোক আর না হোক ওজু নষ্ট হবে।
ওযুর মাকরূহসমূহ
১. প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যয় করা।
২. প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি ব্যয় করা।
৩. মুখমণ্ডলে এমনভাবে পানি নিক্ষেপ করা যে, পানির ছিঁটা অন্যত্র পড়ে।
৪. ওজুর সময় অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা।
৫. ওজুর সময় বিনা ওজরে অন্যের সাহায্য নেয়া।
৬. নতুন পানি নিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ করা।
৭. বাম হাতে কুলী অথবা নাকে পানি দেয়া।
৮. ডান হাতেনাক পরিষ্কার করা।
৯. অযুর জন্য নাপাক জায়গায় বসা।
যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা ওয়াজিব ও সুন্নত
যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা ওয়াজিব
১। পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করার পূর্বে।
২। জানাজার নামায আদায় করার সময়।
৩। পবিত্র কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা কিংবা লিখার সময় ওযু করা ওয়াজিব।
যে সকল ক্ষেত্রে ওযু করা সুন্নত
১। আযান দেয়ার পূর্বে ওযু করা সুন্নত।
২। মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ওযু করা সুন্নত।
৩। বিধর্মীদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করার পূর্বে ওযু করা সুন্নত।
৪। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পূর্বে ওযু করা সুন্নত। ৫। একবার ওযু করে ইবাদাত করার পর ওযু থাকা অবস্থায় পুনরায় ওযু করা সুন্নত।
৬। খাঁটি আলিমদের সাথে দেখা করার পূর্বে ওযু করে নেয়া সুন্নত।
৭। কোন পশু যবেহ করার পূর্বে ওযু করা সুন্নত।
গোসলের বর্ণনা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব গোসল
গোসলের বর্ণনা
গোসল আরবী শব্দ। এর অর্থ ধৌত করা। এ হিসেবে কোন অঙ্গ বা সম্পূর্ণ অঙ্গটি ধোয়া বা সম্পূর্ণ শরীরটি ধোয়া ঐ একই কথা। সব ধরনটিকেই গোসল বলা হয়। কিন্তু প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে গোসল বলি তা হলো, দৈনন্দিন গোসল ফরয হওয়ার জন্য হোক কিংবা ময়লা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যেই হোক সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করার নামই গোসল।
ফরয গোসল মূলতঃ
চারটি কারণে গোসল ফরয হয়ে থাকে-
১। জাগ্রত অবস্থায় হোক কিংবা নিদ্রিত অবস্থায় হোক, নারী অথবা পুরুষ যার হোক না কেন, আকস্মিক উত্তেজনার কারণে কিংবা বিপুল আসক্তি হেতু স্ববেগে বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়।
২। স্বামী-স্ত্রী সহবাসকালে পুরুষের লিঙ্গের অগ্রভাগের মসৃন গোশত পিণ্ড যাকে 'হাশফা' বলে তা স্ত্রীলিঙ্গের ভিতর প্রবেশ করা মাত্রই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের শরীর নাপাক হয়ে যায়, তখন গোসল করা ফরয।
৩। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে কাপড়, বিছানার চাদর বা শরীরে বীর্য দেখা গেলেও গোসল ফরয হয়ে থাকে। এটা স্বপ্নদোষ অথবা অন্য কোন কারণ ছাড়াও হতে পারে।
৪। মহিলাদের হায়েয অথবা নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করে পাক-পবিত্র হওয়া ফরয, এ গোসলও ফরয গোসলের অন্তভুক্ত।
ওয়াজিব গোসল মূলতঃ
ওয়াজিব গোসল দু'প্রকার। মাত্র দুটো কারণেই গোসল ওয়াজিব হয়ে থাকে-
১। মৃত লোকদের গোসল দেয়া জীবিত লোকদের উপর ওয়াজিব।
২। কোন কাফির নাপাক হালতে মুসলমান হলে মুসলমান হওয়ার পূর্বে তার গোসল করা ওয়াজিব। ভুলবশতঃ গোসল না করে থাকলে পরে গোসল করবে, মূলতঃ প্রথমে গোসল করা ওয়াজিব ছিল।
সুন্নত গোসল মূলতঃ
প্রকৃতপক্ষে চারটি কারণে গোসল করা সুন্নত। যেমন-
১। জুমআর নামাযের পূর্বে, যে গোসল দ্বারা জুমআর
নামায আদায় করা হয়।
২। দু'ঈদের দিনে।
৩। যেদিন হাজীগণ হজ্জকার্য সমাপ্ত করে বা আরাফার দিনে।
৪। হজ্জ করবে এ নিয়তে ইহরাম বাঁধবার সময় গোসল করার সুন্নত।
মুস্তাহাব গোসল মূলতঃ
তিনটি বিশেষ কারণে গোসল করা মুস্তাহাব হয়। যেমন-
১। কাফির ব্যক্তির শরীর পাক থাকা অবস্থায় গোসল করা।
২। নাবালেগ যখনই বালেগ হয়েছে, তা অনুমান করতে পারলে, তখন সাথে সাথে গোসল করা।
৩। শবে বরাত ও শবে কদর ইত্যাদি নফল ইবাদাত করার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব।
গোসলের কতিপয় মাসায়েল ও ফরয গোসলের নিয়ত
গোসলের কতিপয় মাসায়েলপূর্বেই বলা হয়েছে, ফরয ও ওয়াজিব গোসল ছাড়া আমরা শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য যে গোসল করে থাকি, তাতে শরীয়তের কোন হুকুমও নেই। আর তারজন্য কুরআন ও সুন্নাহতে কোন প্রকার আদেশ নিষেধও নেই। কিন্তু গোসল সম্পর্কে যত কথা, শরীয়তের হুকুম-মাসয়ালা ইত্যাদি সবই ফরয গোসল শরীয়ত মত আদায় করে পবিত্রতা হাসিল করার জন্য। এখানে গোসলের যেসব ফরয, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হবে, তা সবই ফরয গোসলের জন্য। তবে সাধারণ গোসলেও এসব আদায় করে নিয়ম মাফিক গোসল করলে সাওয়াব পাওয়া যায়। এখন সেসব বিষয় আলোচিত হবে।
ফরয গোসলে ফরয তিনটি। যথাঃ
১। গড়গড়ার সাথে কূলি করা, রোযাদার হলে গড়গড়া করতে হবে না। কারণ, তাতে গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করে রোযা ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
২। দু'নাকের নরম গোশত পর্যন্ত পানি পৌঁছে দেয়া, এটাও রোযাদার হলে করবে না। এতেও রোযা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে ধৌত করা, যদি পুকুর, খাল কিংবা নদীতে গোসল করে, তবে তাতে সরাসরি নেমে শরীর মর্দন করবে, আর ওপরে বালতি বা কলসের পানি দ্বারা গোসল করলে ভালভাবে গায়ে পানি ঢালতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর যে কোন একটি বাদ পড়লে যেমন কুলি, নাকে পানি দেয়া এবং সমস্ত শরীরের মধ্যে একটি পশম বা তার সম পরিমাণ স্থান শুকনো থাকলে ফরয গোসল আদায় হবে না; অপবিত্র থেকে যাবে।
ফরয গোসলে সুন্নত পাঁচটি। যথাঃ
১। দু'হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
২। গোসল করার পূর্বে নারী হোক অথবা পুরুষ হোক, তাদের লজ্জাস্থান ভালভাবে ধৌত করে ফেলা।
৩। শরীরের অন্যত্র কোন প্রকার নাপাক লেগে থাকলে তা পূর্বেই ধুয়ে নিতে হবে।
৪। পা ধৌত করা ছাড়া অবিকল নামাযের ওযুর ন্যায় ওযু করে নেয়া।
৫। সমস্ত শরীরে ভালভাবে পানি বইয়ে দেয়া। কলস বা বালতির পানি দ্বারা দাঁড়িয়ে গোসল করলে পায়ে তিনবার পানি দেয়ার পর উক্ত স্থান হতে সরে পা তিনবার ধৌত করতে হবে। আর পুকুর কিংবা নদীতে গোসল করলে পায়ে তিনবার পানি দেয়ার বদলে তিনটি ডুব দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
ফরয গোসলের মুস্তাহাব দুইটি। যথা :
১। ফরয গোসল হলে কোন স্থান চুল পর্যন্ত শুকনো থাকার সন্দেহ থাকবে না।
২। শরীরে ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আল্লাহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন। গোসলের নিয়মের মধ্যে কোন ওয়াজিব নেই। শুধু ফরয, সুন্নত এবং মুস্তাহাব আছে।
মাসায়ালাঃ
১। কোন মহিলার ফরয গোসল করার সময় চুল যদি খোলা এবং লম্বাভাবে ঝোলানো থাকে, তাহলে গোসলের সময় সব চুল ভেজানো ফরয। কিন্তু শক্ত করে খোঁপা বাধা থাকলে খোঁপা খুলে তা ভেজানোর প্রয়োজন হয় না। শুধু চুলের গোড়ার পানি পৌছালেই চলবে।
২। মহিলাদের শরীরে বা নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে চেড়ে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এর ভিতর কোন স্থান শুকনো থাকলে তাতে ফরয গোসল আদায়
৩। পুরুষদের মাথায় বেশি চুল কিংবা অবৈধভাবে লম্বা চুল, খোঁপা বা বেনী থাকলে তা খুলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। অন্যথায় তার ফরয গোসল আদায় হবে না।
ফরয গোসলের নিয়ত
যদি কারো উপর গোসল ফরয হয়, তবে সে মনে মনে নিম্নোক্ত নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে গোসলের ফরজ ও সুন্নত পালন সহকারে গোসল শুরু করবে। গোসলের নিয়তটি হচ্ছে-
نَوَيْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَتِهِ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফই'ল জানাবাতি।
অর্থঃ আমি নাপাকি দূর করার জন্য গোসলের নিয়ত করছি।
মাসয়ালাঃ
গোসল সম্পর্কে আরো কিছু জানা আবশ্যক যা নিম্নে আলোকপাত করা হলো।
১। ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে একটি পশমের গোড়াও শুকনা থাকবে না।
২। গড়গড়ার সাথে কূলি না করলে গোসল হবে না।
৩। নাকের ভিতর পানি না দিলেও গোসল হবে না।
৪। আংটি গহনা কিংবা অন্য কোন কারণে শরীরের কোন জায়গা শুকনো থাকলে গোসল হবে না।
৫। গোসল শেষে কোন স্থান যদি শুকনো বলে মনে হয়, তবে সে স্থানটুকু ধৌত করলেই চলবে। এর জন্য আবার গোসল করতে হবে না। অনুরূপভাবে কূলি করার কথা বা নাকে পানি দেয়ার কথা ভুলে গেলে, তখন শুধুমাত্র কূলি করলে অথবা নাকে পানি দিলে পূর্ণ হয়ে যাবে। নতুবা গোসল হবে না। গোসলের পূর্বে যেমন নাপাক ছিল, তেমনই থাকবে।
৬। নখ কিংবা অন্য কোথাও আটা, চুন বা মাটি থাকলে, যার কারণে শরীরের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে, তখন তা উঠিয়ে দিতে হবে।
তায়াম্মুমের বিবরণ ও তায়াম্মুম করা কখন জায়েয
তায়াম্মুমের বিবরণ
মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি (আশরাফুল মাখলুকাত)। আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর দ্বারাই তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। সেই ইবাদত বন্দেগী করার জন্য পূর্ব শর্ত হলো অযু অথবা গোসলের। অযু ও গোসল উভয়ই করতে হয় পানি দ্বারা। যখন মানুষ সেই পানি না পায়, অথবা ব্যবহার করতে অপারগ হয় তখন কি করবেঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার প্রতি যথেষ্ট স্নেহ ও দয়াশীল। তাই তার বান্দার ক্ষতি হয়, অথবা হুকুম পালনে ব্যর্থ হয়ে গুনাহগার হয়ে পড়ে, তার জন্য পবিত্র কোরআন মজিদে ইরশাদ করলেন এবং হুকুম দিলেন, অযু ও গোসলে অপারগ সত্বে তায়াম্মুম দ্বারাই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। তাই তিনি ঘোষণা করলেন, আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৪৩)
তায়াম্মুম করা কখন জায়েয
> দেড় কিলোমিটার (অর্থাৎ এক মাইলের) মাঝে যদি কোথাও পাক পানি পাওয়া না যায়।
> যদি কূপের পানি তোলার জন্য কোন প্রকার পাত্র না থাকে।
> এমন পরিমাণ পানি আছে, যাতে অযু বা গোসল হয় না।
> অযু বা গোসল করতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তাতে রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেয়।
> পানি আনতে যেতে পথে বাঘ-ভল্লুক অথবা শত্রুর ভয় থাকে, বা সম্ভাবনা থাকে।
> পানি ক্রয় করার ক্ষমতা না থাকলে।
> প্রবাস বা মুসাফেরী অবস্থায় সাথে যে পরিমাণ পানি আছে, তা দ্বারা অযু বা গোসল করলে নিজের ও বাহন পশুর পানির অভাবে মৃত্যুর আশংকা করলে।
> অযু গোসল করতে গেলে ঈদ বা জানাযার নামায পাওয়া যাবে না, এমন আশংকা থাকলে।
> অযু বা গোসল করতে গেলে বিমান, ট্রেন বা বাস ইত্যাদি ছেড়ে যাবার আশংকা থাকলে।
> অযু বা গোসল করতে গেলে, শরীরের ক্ষতস্থানের ক্ষত বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকলে।
যে বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়, তায়াম্মুমের ফরয, সুন্নত
যে যে বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়
পবিত্র শুকনা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা উত্তম। তবে মাটি না পেলে মাটি জাতীয় বস্তু যেমনঃ বালি, পাথর, চুন, সুরকী, ইট, হরিতাল, সুরমা ইত্যাদি বস্তু দ্বারাও তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। এক কথায় মাটির তৈরি যে কোন পাত্র যথাঃ থালা, বাটি হাঁড়ি, পাতিল, মটকা দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয। এছাড়া অন্য কোন কিছু দ্বারা জায়েয নয়।
অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম করার বস্তুর উপর হাত মারবে এবং যদি ধুলা বালি বেশি মনে হয়, তাহলে এক হাত অন্য হাতের কব্জির উপর ঝাড়া মেরে পরে অযু করতে যে পরিমাণ মুখ মণ্ডল ধৌত করা হয় ঠিক ততটুকু জায়গা একবার মুছে নিবে। দ্বিতীয় বার একইভাবে হাত মেরে হস্তদ্বয়ের কনুই পর্যন্ত একবার মুছে নিবে। স্মরণ রাখবে, এতে যেন তিল পরিমাণ জায়গাও বাদ না যায়। এরপর দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করে নিবে।
তায়াম্মুমের ফরয
১। তায়াম্মুমের উদ্দেশ্যে নিয়ত করা।
২। সমস্ত মুখ মণ্ডল একবার মাসেহ করা।
৩। হস্তদ্বয়ের কনুই পর্যন্ত একবার মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নত
১। নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করা।
২। তায়াম্মুমের বস্তুর উপর হাত রাখার সময় আঙ্গলগুলো ফাঁক করে রাখা।
৩। দুই হাত তায়াম্মুমের বস্তুর উপর রেখে সামনে পিছনে টানা।
৪। তায়াম্মুমের বস্তুর উপর থেকে হাত উঠিয়ে মৃদুভাবে ঝেড়ে নেয়া।
৫। তরতীব মতে (অর্থাৎ) প্রথমে নিয়াত করা, তারপর মুখ মণ্ডল মাসেহ করা, অতঃপর দুই হাতের কনুই পর্যস্ত মাসেহ করে তায়াম্মুম করা।
৬। খুব দ্রুততার সাথে মাসেহ কাজ শেষ করা।
তায়াম্মুম ভঙ্গ হবার কারণ ও তায়াম্মুমের কতিপয় মাসায়েল
তায়াম্মুম ভঙ্গ হবার কারণ
১। যে সমস্ত কারণে অযু ভঙ্গ হয়, সে সমস্ত কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়।
২। পানি পাওয়া গেলে তখনই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা পানির অভাবই তায়াম্মুম করার বিধান দেয়া হয়েছে।
৩। যে সমস্ত কারণে তায়াম্মুম করা জায়েয সে সমস্ত কারণ দূর হয়ে গেলে।
৪। পানি থাকা অবস্থায় রোগের কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছে; এমতাবস্থায় পানি দেখলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে এবং নতুন করে তায়াম্মুম করে নিতে হবে।
তায়াম্মুম বিষয়ক কতিপয় মাসয়ালা
১। একবার তায়াম্মুম করে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করা জায়েয হবে। নামাযের জন্য যে তায়াম্মুম করা হয়েছে তা দ্বারা কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য সকল ইবাদত করা জায়েয হবে। কিন্তু যদি শুধু মাত্র কোরআন তেলাওয়াতের জন্য তায়াম্মুম করা হয়, তাহলে ঐ তায়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় করা জায়েয হবে না।
২। যদি কোন লোকের অযু গোসল উভয়ই ফরয হয়,কিন্তু অযু করলে শারীরিক ভয়ের কোন কারণ নেই অথচ গোসল দ্বারা স্বাস্থ্যহানির ভয় আছে এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির প্রথমে অযু করে নেবে এবং পরে গোসলের নিয়তে তায়াম্মুম করবে।
৩। কোন মাটিতে নাজাসাত লেগে তা শুকিয়ে গিয়েছে, তাতে ঐ জায়গা পাক বলেই ঐখানে নামায আদায় করা যায়েয হবে। কিন্তু ঐ মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়েয হবে না।
৪। যদি কোন ব্যক্তির অযু গোসল উভয়টির জন্য তায়াম্মুম করা প্রয়োজন হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তি অযু ও গোসলের জন্য এক সাথে নিয়ত করে তায়াম্মুম করলে একই তায়াম্মুম দ্বারা অযু গোসল উত্তয়টাই সম্পন্ন হবে। কিন্তু যদি এক কাজের জন্য নিয়্যত করে তাহলে উভয় কাজ সম্পন্ন হবে না।
আরো পড়ুন : আযান দেওয়ার নিয়ম ও আযানের উত্তর - ইসলামিক বিবরণ
পবিত্রতার বিবরণ ও অপবিত্র হওয়ার কারণসমূহ
তাহারাত
তাহারাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। আর শরীয়তের পরিভাষায় অন্তরকে সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা এবং বাহ্যিকভাবে সকল অপবিত্রতা থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাকে তাহারাত বলা হয়।ইসলামী বিধানে পাক পবিত্রতার গুরুত্ব অধিক। তাছাড়া সাধারণভাবেও মানুষের পাক পবিত্রতা রক্ষার প্রয়েজেন রয়েছে। মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব সে হিসেবে অন্যান্য নিকৃষ্ট জীব বা পশু পাখির মত মানুষ অপবিত্র বা অপরিষ্কার থাকতে পারে না। এটা মানুষের মর্যাদার বিপরীত। পাক পবিত্রতা দু 'প্রকারের-
১। অভ্যান্তরীণ পাক পবিত্রতা
২। বাহ্যিক পাক পবিত্রতা। অভ্যান্তরীণ পাক পবিত্রতাঃ
মনের কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, জিদ, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি কৃস্বভাবগুলো সৃষ্টি হয়ে মানুষকে অভ্যান্তরীণ নাপাক বা অপবিত্র করে ফেলে। এগুলো দূরীভূত করে অর্থাৎ চরিত্র সংশোধন করে মানুষকে অভ্যান্তরীণ পবিত্রতা হাসিল করতে হয়।
বাহ্যিক পাক পবিত্রতাঃ বাহ্যিক অপবিত্রতা সৃষ্টি হয় কতগুলো বাহ্যিক কারণ দ্বারা। তা থেকে পবিত্রতা হাসিলও করতে হয় আবার বাহিরের বস্তুসমূহের মাধ্যমে যথাস্থানে এসব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করব। তার পূর্বে পাক পবিত্রতার ফযীলত সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা হল। আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
সম্ভবতঃ এজন্য আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত নামায আদায়ের জন্য তার বান্দার প্রতি পাক পবিত্রতার জন্য শুধু শর্ত করে দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, পাক পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৯)
অন্য এক হাদীসে বলেছেন, পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪২২)
অপবিত্র হওয়ার কারণসমূহ
মানুষ নাপাক হয় দু'ভাবে। আভ্যন্তরীণভাবে এবং বাহিক্যভাবে। বাহিক্যভাবে নাপাক হওয়ার অবস্থা আবার দু'টি। যেমন- (ক) দেহাভ্যন্তরগত নাপাক ও (খ) বহিরাগত নাপাক।দেহাভ্যন্তরগত নাপাকঃ স্বামী-স্ত্রীর গুপ্ত অঙ্গ মিলিত হওয়া, যে কোনভাবে বীর্যপাত হওয়া, স্ত্রীলোকের হায়েয-নেফাস হওয়া।
উল্লেখিত অবস্থাগুলোতে মানুষ অপবিত্র হয়। এসকল অবস্থায় পবিত্রতা হাসিলের জন্য গোসল করা আবশ্যক। এছাড়া মানুষের মল মূত্র দ্বার হতে মল-মূত্র, বা অন্য কিছু বের হওয়া কিংবা শরীরের কোন জখমাদি হতে রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি বের হয়ে জখমের মুখ হতে গড়িয়ে যাওয়ায় মানুষ লঘু নাপাক হয়, অর্থাৎ এসব অবস্থায় গোসলের প্রয়োজন হয় না কেবলমাত্র ওযু করলেই পবিত্রতা হাসিল হয়।
বহিরাগত নাপাকঃ মানুষের মল-মূত্র অঙ্গে লাগা। হালাল জন্তু অর্থাৎ যেসব জন্তুর মাংস হালাল সেগুলো। যথা- গরু, ছাগল, ভেড়া, মেষ, দুম্বা ইত্যাদির মল-মূত্র, এছাড়া রক্ত, শরাব, শুকরের মাংস শুকরের পশম, শুকরের হাড় প্রভৃতি নাপাক বস্তুগুলো শরীরে লাগলে শরীর নাপাক হয়। এ অবস্থায় শরীরের নাপাক স্থানটুকু উত্তমভাবে ধুয়ে ফেললেই শরীর পবিত্র হয়। এমতাবস্থায় গোসলের প্রয়োজন হয় না। উল্লেখিত নাপাক বস্তু কাপড় চোপড়ে লাগলে তাও নাপাক হয়ে যায়। তখন তা ভালভাবে ধুয়ে পাক পবিত্র করতে হয়।
নাজাসাতে গলীজা ও খফীফা, অপবিত্রা দূরীকরণের নিয়ম
নাজাসাত সাধারণভাবে দু' প্রকার। যথাঃ (ক) নাজাসাতে গলীজা ও (খ) নাজাসাতে খফীফা। যেসকল নাপাক বস্তু শরীর বা কাপড় চোপড়ে এক দিরহাম কিংবা তদাপেক্ষা কম (হাতের তালু সোজা করে তাতে পানি ঢাললে যে স্থান টুকুতে পানি স্থির হয়ে থাকে, তাকে এক দিরহাম বলে) পরিমাণ লাগলে তা নিয়ে নামায পড়লে মাকরূহের সাথে নামায আদায় হবে, তাকে নাজাসাতে গলীজা তথা গুরু অপবিত্র বলে। এ প্রকার নাজাসাত এক দিরহামের বেশি লাগলে তা নিয়ে নামায হবে না। মল-মূত্র, রক্ত, পুজ, শুকরের মাংস, পশম, হাড় মানুষ কিংবা জ্বীব-জন্তুর শুক্র ইত্যাদি এ জাতীয় নাজেসাত।আর যেসকল নাপাক বস্তু শরীরে বা কাপড় চোপড়ে এক দিরহামের বেশি পরিমাণ লাগলেও তা নিয়ে নামায পড়লে মাকরূহের সাথে আদায় হবে; এ জাতীয় নাপাক বস্তুকে নাজাসাতে খফীফা তথা লঘু নাপাকী বলে।
এ প্রকার নাজাসাত শরীরের কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা কাপড়-চোপড়ের কোন এক অংশে এক চতুর্থাংশের কম পরিমিত স্থানে লাগলে তা নিয়েও মাকরূহের সাথে নামায হবে কিন্তু এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ স্থানে লাগলে তা নিয়ে নামায জ্বায়েয হবে না।
বহিরাগত অপবিত্র দূরীকরণের নিয়ম
১। নাজাসাতে গলীজা শরীরে লাগলে পানি দিয়ে ঐ স্থান ভালভাবে ঘষে ধোবে। তার দাগ ও গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত ধুতে থাকবে। অবশ্য কেউ কেউ বলেন উত্তমরূপে তিনবার ধোবার পরও যদি দাগ ও গন্ধ দূর না হয়, তবে তাতেই পাক হয়ে যাবে আর ধুতে হবে না।২। নাজাসাতে গলীজা কাপড় চোপড়ে লাগলে তাও উপরোক্ত নিয়মে পবিত্র করতে হবে।
৩। অঙ্গ প্রত্যঙ্গে তরল নাজাসাত লাগলে তাও তিনবার ভালভাবে ঘসে ধুয়ে পবিত্র করতে হবে। আর তরল নাজাসাত কাপড় চোপড়ে লাগলে ভালভাবে রগড়িয়ে একবার ধোলে পবিত্র হবে।
৪। কোন কাষ্ঠখণ্ডে কিংবা যমীনে নাজাসাত লাগলে তা না ধুয়ে যদি নাজাসাত লাগা কাষ্ঠাংশটুকু কেটে ফেলা হয় এবং নাজাসাত লাগা যমীনের নিম্ন হতে খুড়ে মৃত্তিকা উঠিয়ে ফেলা হয়, তবে ঐ কাষ্ঠখণ্ড এবং যমীন পবিত্র হয়ে যাবে।
৫। দা, কুড়াল, খোনতা, কোদাল, অলঙ্কারাদিতে নাজাসাত লাগলে উত্তমরূপে ঘষে মেঝে পরিষ্কার করিলেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে নকশাদার তৈজসপত্র ও অলঙ্কারাদি হলে তার মধ্যে নাজাসাত লেগে থাকে বলে ঐ প্রকার দ্রব্যগুলো উত্তমরূপে ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।
৬। হোগলা, চাটাই, পাটি, ইত্যাদিতে নাজাসাত লাগলে তা এভাবে ধুয়ে টানিয়ে রাখতে হবে। পানি ঝরে গেলে আবার ধুয়ে টানিয়ে রাখতে হবে। এভাবে তিনবার করতে হবে। এ বস্তুগুলো নিংড়ানা সম্ভব নয়, সেজন্যই এরূপ করতে হবে।
৭। ধাতব নির্মিত তৈজসপত্র এবং অলঙ্কারাদিতে তরল নাজাসাত লাগলে তাও ঐ নিয়মে ধুয়ে পবিত্র করবে। ধাতব দ্রব্যসমূহ আগুনে পোড়া দিলেও তার নাপাকী দূর হয়ে যায়।
আরো পড়ুন : নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাতসমূহের সহীহ বিবরণ
পবিত্র অপবিত্রের মাসায়েল ও পাক নাপাকের মাসায়েল
কতিপয় পবিত্র-অপবিত্রের মাসায়েল
১। মশা, মাছি বা ছাড়পোকার রক্ত পবিত্র, সুতরাং তা শরীরে বা কাপড়ে লাগলে তা নিয়ে নামায আদায় করলে জায়েয হবে।২। অপবিত্র বস্তু মেশানো তৈল কোন অঙ্গে মাখলে অঙ্গ নাপাক হয়। ঐ অঙ্গ তিনবার রগড়িয়ে ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।
৩। অপবিত্র বস্তু মিশানো মেহেদী পাতার রং হাতে মাখলে তা ভালভাবে তিনবার ধুলেই পবিত্র হবে। এজন্য হাতের রং উঠিয়ে ফেলতে হবে না।
৪। কাফেরদের বস্ত্র পবিত্র অপবিত্র ইহা সন্দেহের কথা, এরূপ কাপড় পড়ে নামায পড়লে মাকরূহ হবে।
৫। কুকুরের পশম বা দেহ নাজাসাত নয়, তবে তার মুখের লালা পবিত্র নয়।
৬। ভেজা কাপড় পড়া অবস্থায় বাহ্য মাকাম হতে হাওয়া বের হলে ঐ কাপড় অপবিত্র হয় না।
৭। নাপাক বিছানায় শয়ন করলে শরীর বা পরিহিত বস্ত্র অপবিত্র হবে না। অবশ্য ঘর্ম নির্গত হয়ে নাজাসাতের সঙ্গে মিলে ঐ ঘর্ম দেহে বা বস্ত্রে লাগলে তা অপবিত্র হয়ে যায়।
৮। নাপাক পানিতে ভেজানো কাপড়ের ওপর শুকনো পবিত্র কাপড় রাখলে তা অপবিত্র হয় না, তবে ঐ কাপড় হতে যদি তার নাজাসাত বা গন্ধ শুকনো কাপড়ে লেগে যায় অথবা ভেজা অপবিত্র কাপড়ের পানিতে যদি শুকনো কাপড়ও একবারে ভিজে যায় তবে তা অপবিত্র হবে।
৯। জুতো কিংবা চামড়ার মোজায় রক্ত, বীর্য অথবা পাতলা গোবর লেগে শুকিয়ে গেলে যদি তা ঘামে কিংবা অন্য কিছুতে ঘসে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয়, তবে তাতেই পবিত্র হয়ে যায়; পানি দ্বারা ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।
১০। অবশ্য ঘন নাজাসাত জুতোয় বা মোজায় লাগলে পানি দ্বারা ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।
১১। বেশি ঘন নাজাসাত জুতোয় লাগলে তা ঘসে উঠিয়ে ফেলতে পারলেই পবিত্র হয়ে যায়।
১২। কোন বৃহদাকার পবিত্র বিছানার চাদরের এক কোণে সামান্য জায়গায় নাজাসাত লাগলে সম্পূর্ণ ফরাশ বা বিছানা অপবিত্র হয় না। অর্থাৎ নাজাসাত লাগা কোণা বাদ দিয়ে তার অন্য কোণায় নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে।
১৩। প্রস্রাব লাগানো কাপড়ের সাথে শুকনো কাপড় মিশিয়ে রাখলে তা অপবিত্র হয় না। অবশ্য প্রস্রাব বা তার গন্ধ লেগে গেলে অপবিত্র হয়ে যায়।
১৪। জুতো কিংবা মোজোয় তরল নাজাসাত লাগলে তা ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।
১৫। নাজাসাত মিশ্রিত সুরমা বা কাজল চোখে দিলে তা না ধুয়ে নামায আদায় করা যায়, তবে চোখের পানিতে তা ভিজে গড়িয়ে গেলে না ধুয়ে নামায আদায় করা জায়েয নয়।
১৬। নাজাসাত মিশ্রিত রং কাপড়ে লাগলে ঐ কাপড় ধুয়ে নিংড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত রঙিন পানি পড়তে থাকবে ততক্ষণ ঐ কাপড় পবিত্র হবে না। পানি রং শূন্য হলে কাপড় পবিত্র হয়েছে বুঝতে হবে।
১৭। নাপাক মাটির ওপর পাক বালু বা মাটি বিছিয়ে তার ওপর নামায আদায় করলে বৈধ হবে।
১৮। শিশু সন্তান মার দুধ পান করে সাথে সাথে ঐ দুধ মার শরীরে বমি করে ফেলে যদি ঐ বমি তিনবার চেটে উঠিয়ে নেয় তবে ঐ স্ত্রীলোকের শরীর অপবিত্র হয়ে যাবে।
১৯। গোবর অপবিত্র বটে; কিন্তু শুকনো গোবর জ্বালানো ধোয়া কাপড়ে লাগলে সে কাপড় অপবিত্র হয় না।
২০। চুন-সুরকী ছাড়া ইটের ওপর নাজাসাত লাগলে ঐ ইট ধুয়ে পবিত্র করতে হয়। ঐরূপ নাজাসাত শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও না ধোয়া পর্যন্ত পবিত্র হবে না।
২১। চুন-সুরকী দ্বারা প্রলেপ যুক্ত ইটে নাজাসাত লেগে তা শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে তার ওপর নামায আদায় করা যায়; কিন্তু ঐরূপ ইট দ্বারা তায়াম্মুম বৈধ নয়।
২২। ঠিক ঐরূপ মাটিতে নাজাসাত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সে মাটিতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা যায় কিন্তু ঐ মাটিতে তায়াম্মুম বৈধ নয়।
২৩। যদি এমন কোন পুরু তক্তার এক পিঠে নাজাসাত লাগে যে, সেটাকে মাঝখান থেকে চিড়ে দু'ভাগ করা যায়, তবে ঐ তক্তার অপর পিঠে দাড়িয়ে নামায পড়া জায়েয। কিন্তু তক্তা যদি এরূপ পাতলা হয় যে, মাঝ খান থেকে চিড়ে দু'ভাগ করা সম্ভব নয়। তবে ঐ তক্তার ওপর দাড়িয়ে নামায পড়া বৈধ নয়।
২৪। দেহে বা কাপড়ে আলকাতরা লাগলে তা নিয়ে নামায পড়া বৈধ নয়, যেহেতু আলকাতরা পবিত্র বস্তু নয়।
২৫। হালাল জীবের পঁচা ডিম পবিত্র।
২৬। জীবিত ব্যক্তির মুখের লালা পবিত্র, মৃতের লালা পবিত্র নয়।
২৭। মানুষের কফ সর্দি কাশি অপবিত্র নয়। তা কাপড়-চোপড় বা শরীরে লাগলে তা নিয়ে নামায বৈধ।
২৮। কুকুরের দেহ বা পশম অপবিত্র না হলেও তার ভেজা দেহ অপবিত্র। অতএব তাদের ভেজা দেহের সাথে কাপড় চোপড় লাগলে তা নিয়ে নামায আদায় করা জায়েয নয়।
২৯। মাছের বিষ্ঠা পবিত্র। তা শরীর বা কাপড়ে লাগলে ধুয়ে নামায পড়া যায়।
৩০। বমি নাপাক বস্তু। সেটা শরীর বা কাপড়ে লাগলে ধুয়ে ফেলে নামায আদায় করতে হয়।
৩১। বাঘের চর্বি নাপাক। যে কান রোগ ব্যধিতে তা শরীরে মালিশ করলে রগড়িয়ে ধুয়ে উঠিয়ে নামায আদায় করতে হয়।
৩২। মানুষ, শুকর এবং সাপ ছাড়া অন্য যে কোন জন্তুর চামড়া শুকিয়ে দাবাগত করে তার ওপর নামায আদায় করা যায় (যেহেতু সেগুলোর চামড়া ভালভাবে শুকালে পবিত্র হয়ে যায়)।
৩৩। গোয়াল ঘরে কিংবা পায়খানার ছাদে যদি নাজসাত না থাকে তবে দাড়িয়ে নামায পড়লে মাকরূহের সাথে নামায আদায় হবে।
আরো পড়ুন : সাতটি কালিমার আরবী ও বাংলা উচ্চারণ এবং তার অর্থ।
তরল পদার্থের পাক-নাপাকের মাসায়েল
১। নদ নদী, সাগর, পুকুর, হ্রদ প্রভৃতি বৃহৎ জলাশয়ের পানি তিন অবস্থার যে কোন একটি পরিবর্তন হলে অর্থাৎ রং, স্বাদ এবং ঘ্রাণ যে কোন একটি পরিবর্তন হলে উহা নাপাক বুঝতে হবে। ঐ তিন অবস্থায় যে কোন একটির পরিবর্তন ঘটলে সেই পানি দ্বারা ওযু করা বৈধ হবে না।অবশ্য ইন্দিরা, কূপ, বরফ বা বৃষ্টির পানির তিন অবস্থার যে কোন একটি অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও নাপাক হয় না; তা দ্বারা ওযু করা চলে।
২। পানির সাথে অন্য বস্তু মিশে তার স্বাদ, রং এবং ঘ্রাণ এ তিনটি অবস্থার যে কোন একটি পরিবর্তন হলে তা দ্বারা ওযু গোসল জায়েয হবে না। ঐ পানি কোন মাটিতে মিশলে। সেই মাটির দ্বারা তায়াম্মুমও বৈধ হবে না।
৩। কোন পবিত্র বস্তু ধোয়া পানি দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ।
৪। মৃত ব্যক্তির ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র হয়ে যায়। অতএব তা দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ নয়।
৫। ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি দ্বারা পুনরায় ওযু গোসল করলে মাকরূহের সাথে জায়েয হবে। এরূপ পানি পান করাও মাকরূহ।
৬। অল্প পানিতে নাজাসাতে গলীজা পতিত হলে ঐ পানি নাজাসাতে গলীজায় পরিণত হয়।
৭। পাক পানি দিয়ে এন্তেঞ্জা করার পরে উদ্ধৃত্ত পানি দিয়ে ওযু গোসল করার কোন দোষ নেই।
৮। পাক পানি দিয়ে কোন অপবিত্র বস্তু ধুলে সেই মুস্তামাল (ব্যবহৃত) পানিও অপবিত্র হয়ে যায়। এরকমপানি কোন দ্রব্যে লাগলে যদি ঐ পানি প্রথমবার ধোয়ার পানি হয়, তবে ঐ দ্রব্যও অপবিত্র হয়ে যায়।
৯। কোন জলাশয় বা কূপ দশ হাত দৈর্ঘ্য ও দশ হাত প্রস্থ আয়তন অপেক্ষা বৃহদায়তন বিশিষ্ট হলে তার পানিতে নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খফীফা যা ই পড়ুক না কেন ঐ পানি অপবিত্র হবে না।
১০। পানিতে কোন নাজাসাত পতিত হয়ে পানি ছিটে শরীর কাপড়ে লাগলে যদি তাতে নাজাসাতের কোন চিহ্ন না পাওয়া যায়, তবে তাতে শরীর বা কাপড় অপবিত্র হবে না।
১১। বৃষ্টির পানি, বরফের পানি, শিলাগলা পানি ইত্যাদি যাবতীয় পানির হুকুম নদী এবং পুকুরের পানিরই অনুরূপ।
১২। কোন ইন্দিরা, কুয়ায় মানুষের পায়খানা, গোবরাদি পড়লে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায়। বকরীর দু'চারটি লাদ পড়লে সাথে সাথে উঠিয়ে ফেললে পানি অপবিত্র হয় না।
১৩। ইন্দিরা বা কুয়ায় কোন জীব-জন্তু পড়ে মরে থাকলে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায়। ঐ পানি পবিত্রকরতে হলে পতিত জন্তুর আকার, সংখ্যা এবং প্রকারভেদে মাসয়ালা অনুযায়ী বিশ, চল্লিশ, ষাট, আশি, একশ বালতি কিংবা সম্পূর্ণ পানি তুলে ফেলে তা পবিত্র করতে হয়।
১৪। পানির ন্যায় খেজুরের রস, ডাবের পানি কলাপাছের পানি, গোলাপ জল, ইক্ষুর রস প্রভৃতিও পবিত্র বস্তু বটে তা দ্বারা অপবিত্র বস্তু ধুলে পাক হয়ে যায়।
১৫। দুধ, ঘি ও তেল তরল পদার্থ হলেও তৈশাক্ততার কারণে এগুলো দ্বারা ধূয়ে কোন অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করা চলে না।
১৬। জমজমের পানি দ্বারা নাপাক বস্তু ধোয়া মাকরূহ। সুতরাং ঐ পানি দিয়ে কোন মুহদেছ (যাহার ওযু ভঙ্গ হয়েছে) এবং জুনুব (যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে) ব্যক্তির ওযু-গোসল করা উচিত নয়। অবশ্য ঐ পানি ব্যতীত অন্য পানি না পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করা যাবে।
১৭। মধু, ঘি, তেল, সিরাপ ইত্যাদিতে নাজাসাত মিশে অপবিত্র হয়ে গেলে নাজাসাত মিশ্রিত বস্তুকে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে জ্বলে দেবে, যখন তা অর্ধেক পরিমাণ হয়ে যাবে। তখন পুনরায় পূর্বোক্ত নিয়মে জ্বলে দিয়ে ঐ পরিমাণ করলে। এভাবে তিনবার করলে ঐ বস্তু পবিত্র হয়ে যাবে।
পায়খানা-প্রস্রাবের বর্ণনা
পায়খানা-প্রস্রাব করতে গিয়ে মানুষের সভ্য রীতিনীতি অবলম্বন করা অপরিহার্য কর্তব্য। অন্যান্য জীব-জন্তুর ন্যায় উন্মুক্তভাবে তার পায়খানা-প্রস্রাব করা চলে না। অতএব পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য চার দেয়াল এবং ছাদ বিশিষ্ট একটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করা আবশ্যক।পায়খানা-প্রস্রাবের নিয়ম-কানুন
পায়খানা-প্রস্রাবের হাজত হলে নির্দিষ্ট স্থানে গমন করে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করে প্রথম বাম পা বাড়িয়ে উক্ত প্রকোষ্ঠে ঢুকবে। দোয়া না জানলে বা পড়তে ভুল হলে মনে মনে 'বিসমিল্লাহ' পাঠ করবে। ভেতরে ঢুকে দাড়ানো অবস্থায় কাপড় উন্মোচন না করে বসার সময় উন্মোচিত করবে। ঢিলা-কুলুখ সাথে নিয়ে যাবে। কেবলার দিকে মুখ দিয়ে বা পিছন ফিরিয়ে বসবে না।পায়খানা-প্রস্রাব অবস্থায় বিড়ি সিগারেট সেবন করবে না, সেটা এমনিই মাকরূহ তাহরীমী। পায়খানা-প্রস্রাব অবস্থায় সেবন করা আরো বেশি অন্যায়।
পায়খানা-প্রস্রাব অবস্থায় কোন কিছু পানাহার করা, কথা-বার্তা বলা, কাউকে সালাম দেয়া না কারো সালামের জবাব দেয়া, মনে মনে কুরআন পাঠ করা প্রভৃতি মাকরূহ।
বসা অবস্থায় চারদিকে বা আকশের দিকে তাকাবে না, লজ্জা স্থানের দিকেও তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। মনে মনে কোন চিন্তা-ভাবনা করবে না। সাথে কুরআন-হাদীসের কোন আয়াত, কালাম বা আল্লাহ রাসুলের নাম লিখিত কাগজাদি নিয়ে ঢুকবে না।
পায়খানায় গিয়ে হাজত শেষ হয়ে গেলে অযথা দেরি না করে প্রথমে কুলুখ ব্যবহার করে পানি দ্বারা শৌচ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে। পায়খানায় অধিক সময় বসে থাকলে অর্শ রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। পায়খানা-প্রস্রাব করার জন্য ঢুকা ও বেরিয়ে আসার সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।
আরো পড়ুন : নামাজের সকল প্রয়োজনীয় দোয়া
পায়খানায় প্রবেশের দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِউচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ জ্বিন ও দুষ্ট নারী জ্বিনের অনিষ্ট থেকে। (সহীহ বুখারি, হাঃ ৬৩২২)
পায়খানা হতে বের হওয়ার দোয়া
غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِيউচ্চারণঃ গুফরানাকা আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আননিল আযা ওয়া আফানী।
অর্থঃ আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি কষ্টকর জিনিস আমার থেকে বের করিয়ে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপত্তা দান করিয়াছেন। (ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩০১)
এস্তেঞ্জার পদ্ধতি ও যে বস্তু দিয়ে কুলুখ জায়েজ ও নাজায়েজ
এস্তেঞ্জার পদ্ধতি
পায়খানা প্রস্রাবের পরে ঢিলা-কুলুখ কিংবা পানি দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়াকে এস্তেঞ্জা বলে। যে কোন বস্তু দ্বারা হোক এন্তেঞ্জা করে পবিত্র হওয়া ফরজ এবং তার নির্দিষ্ট বিধি-বিধানগুলো মেনে চলা সুন্নত।পায়খানা-প্রস্রাব উভয় স্থলে শুধু পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করা গেলেও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নত। কোন কোন সময় শুধু ঢিলা-কুলুখ দিয়ে এস্তেঞ্জা করলেই পবিত্রতা হাসিল হয় চাই পানি থাকুক এবং নাই বা থাকুক। যথাঃ মল যদি শুকনো কঠিন হয় এবং গুহ্যদ্বারের মুখ হতে মল যদি একটুও গড়িয়ে চারপাশে না লাগে, তবে শুধুমাত্র ঢিলা-কুলুখ দ্বারা ভালভাবে পরিষ্কারকরলেই চলবে। তবে যদি তা গড়িয়ে চারপাশে লেগে যায় এবং যদি এ নাজাসাতের পরিমাণ এক দিরহাম অপেক্ষা কম হয়, তবে তা পানি দিয়ে ধৌত করা ওয়াজিব। আর এক দিরহামের বেশি হলে ফরয। বাম হাত দ্বারা এন্তেঞ্জা করবে এবং ডান হাত দিয়ে পানি ঢেলে দেবে। কুলুখ ব্যবহারকালেও বাম হাত ব্যবহার করবে।
যে সকল বস্তু দিয়ে কুলুখ ব্যবহার করা যায়
১। মাটির ঢিলা, ২। পাথরের টুকরো, ৩। ছেঁড়া ন্যাকড়া, ৪। শুকনো বৃক্ষপত্র, ৫। শুকনো ঘাস, ৬। শুপারি বা নারকেলের ছোলা। এছাড়া এমন বস্তুসমূহ, যা দ্বারা পরিষ্কার হওয়া যায় এবং ঐ সকল জিনিস যা দ্বারা অন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজ হয় না।যে সব বস্তু কুলুখে ব্যবহার জায়েয নয়
লৌহ, তাম্র, পিতল, স্বর্ণ, রৌপ্য, কয়লা, চুনা, মসজিদের মাটি, গৃহের দেয়াল, কাঁচা ঘাস, কাঁচা কুটা, কাঁচা পর, চুল, গৌফ, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, লিখিত বা অলিখিত কাগজ, ফল, তরকারী, শস্য, হালাল বা হারাম জন্তুর মাংস, পশম, হাড় শিং, যে বস্তুর দ্বারা একবার কুলুখ নেয়া হয়েছে, এসব বস্তু দ্বারা কুলুখ ব্যবহার করা মাকরূহ।তরল পদার্থের মাঝে খেজুর রস, ডাবের পানি, তালের রস, ইক্ষুর রস বা যে কোন ফল-ফলাদির রস ইত্যাদি বস্তুগুলো যেহেতু উত্তম খাদ্য এবং মূল্যবান বস্তু; সেহেতু তা দ্বারা এস্তেঞ্জা করা মাকরূহ।
এছাড়া কতগুলো তরল পদার্থ রয়েছে; তৈলাক্ত বিধায় তা দ্বারাও পবিত্রতা হাসিল হয় না। যেমনঃ দুধ, ঘি, তেল, সিরকা প্রভৃতি। এগুলো এস্তেঞ্জায় ব্যবহারে দু'টো অপরাধ। প্রথমত এগুলা মূল্যবান বস্তু, দ্বিতীয়তঃ এগুলো দ্বারা পবিত্রতাও হাসিল হয় না।
কুলুখ ব্যবহারের নিয়ম পদ্ধতি
প্রস্রাব-পায়খানার পরে শুধুমাত্র পানি দ্বারা ধুলেই পবিত্রতা হাসিল করা যায় সত্য; কিন্তু তবুও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের প্রয়োজন আছে। প্রস্রাবের ক্ষেত্রে কুলুখ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এক কারণে এবং পায়খানার ক্ষেত্রে কুলুখের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন কারণে।স্ত্রীলোকের অবশ্য প্রস্রাবের সময় কুলুখ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই , যেহেতু তাদের সমস্ত প্রস্রাব একবারে বের হয়ে আসে। অতএব, প্রস্রাবের পরে পানি দিয়ে ধৌত করলেই পবিত্রতা হাসিল হয়; কিন্তু পুরুষের মূত্রনালীর ভেতরে কতগুলো প্যাঁচ থাকার কারণে তাদের প্রস্রাব হওয়ার পরও কিছু মূত্র ঐ প্যাঁচে আটকে থাকে এবং তা ধীরে ধীরে ফৌটা ফৌটা করে বের হতে থাকে। এজন্য পুরুষের প্রস্রাবের পরও কিছু সময় বসে থাকতে হয়। বসা অবস্থায় গলা খাকরান কিংবা জোরে জোরে কাশি দিলে আটকানো মূত্র তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসে। এজন্য কিছু সময় ওঠা-বসা করা অথবা পদচারণা করা বা এক পায়ের সাথে অন্য পায়ের প্যাঁচ দেয়া ইত্যাদি কাজগুলো করা যেতে পারে। তাতে যে মূত্র ফোঁটা বের হয়ে আসবে, তা কুলুখে শোষণ করে নেবে। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর যখন মনে হবে, ভেতরে আর প্রস্রাব নেই, তখন পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে।
পায়খানার ক্ষেত্রে কুলুখ নেয়ার কারণটি আলাদা; সুতরাং পায়খানার পরে পুরুষ-স্ত্রী উভয়েরই কুলুখ ব্যবহার করা দরকার। মল একটি দুর্গন্ধযুক্ত জঘন্য পদার্থ। পায়খানা করার পর মলদ্বারের মুখে বা তার আশে পাশে যে মল লেগে থাকে, সরাসরি তাতে হাত লাগিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করা যেমনি একটি রুচিগর্হিত কাজ, তেমনি মন্দ কাজও বটে। যেহেতু ঐ মল হাতে লাগলে সহজে তার দুর্গন্ধ হাত হতে দূর হয় না। এজন্যই নারী পুরুষ প্রত্যেকের পায়খানা করার পরে পানি ব্যবহারের পূর্বে কুলুখ ব্যবহার করা আবশ্যক।
কুলুখ সর্বনিম্ন তিনটি হতে সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত প্রয়োজনানুসারে ব্যবহার করবে। তবে বেজোড় সংখ্যা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
গ্রীষ্মকালে পুরুষগণ প্রথম কুলুখটি সম্মুখ দিক থেকে টেনে পিছনের দিকে নেবে। দ্বিতীয়টি তার উল্টো এবং তৃতীয়টি দ্বিতীয়টির উল্টো নিবে।
শীতকালে পুরুষগণ এর বিপরীত করবে। ইচ্ছা করলে তার অনুরূপ করতে পারে। গ্রীষ্মকালে পুরুষদের এরূপ কুলুখ ব্যবহারের কারণ হলো, ঐ সময় অণ্ডকোষ কিছুটা ঝুলে থাকে। কাজেই প্রথম ঢিলাটি সম্মুখ হতে পেছনে না নিয়ে যদি পেছন হতে সম্মুখ দিকে আনা হয়, তবে ঢিলায় লাগানো ময়লা অন্ডকোষে লেগে যেতে পারে। কিন্তু শীতকালে অণ্ডকোষ যেহেতু সঙ্কুচিত থাকে, কাজেই তখন যে কোনভাবে কুলুখ ব্যবহার করা যায়, এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
আর স্ত্রীলোকদের যেহেতু পুরুষের মত কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু তারা প্রথম কুলুখ অগ্রপশ্চাত বা যে কোন দিক হতে ব্যবহার করতে পারে।
আরো পড়ুন : নারী ও পুরুষের সহীহ নামাজ শিক্ষা চিত্রসহ
হায়েযের বর্ণনা ও হায়েযের কতিপয় মাসায়েল
স্বাভাবিক অবস্থায় বালেগা নারীর রেহেম তথা গর্ভধার হতে প্রতি মাসে অনায়াসে যোনিপথ দিয়ে কিছুদিন যে রক্তস্রাব হয়, তাকে হায়েয বলে। মূলতঃ এর নিম্নতম মুদ্দত তিন দিন তিন রাত এবং ঊর্ধ্বতম মুদ্দত দশদিন দশ রাত। এটা সচরাচর নয় বছর বয়ঃক্রমকাল থেকে পঞ্চাশ কিংবা ষাট বছর বয়ঃক্রমকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। উল্লেখ্য যে, বয়ঃক্রমকালের পূর্বে কিংবা পরে রক্তস্রাব দেখা দিলে তা হায়েয নয়; সেটা এস্তেহাযা বা রোগের রক্ত বলে বুঝতে হবে।মনে রাখবে, হায়েযওয়ালী নারীদের জন্য শরীয়তে যেসকল বিধি-নিষেধ রয়েছে, এস্তেহাযাওয়ালী নারীদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। গর্ভধারণ করলে সন্তান প্রসব না হওয়া অবদী নারীদের হায়েয বন্ধ থাকে। এ সময় যদি কোনরূপ রক্তস্রাব দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে যে, তা হায়েয নয় বরং এস্তেহাযা বা রোগের-রক্ত।
আর স্বাস্থ্যবতী নারীদের প্রতি মাসে (গর্ভকাল ছাড়া) নিয়মিত রক্তস্রাব হলেও অনেক স্বাস্থ্যহীনা এবং রোগাক্রান্ত নারীদের কোন কোন মাসে রক্তস্রাব বন্ধ থাকতেও দেখা যায়। প্রায় মহিলাদেরই প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট মুদ্দত রক্তস্রাব হয়; কিন্তু অনেকেরই আবার কখনো ঐ মুদ্দত কাল কম বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন মাসে চারদিন, কোন মাসে ছয়দিন, আবার কোন মাসে তিন দিন এভাবে হয়। যা হোক, বিবাহিত-অবিবাহিত উভয় নারীদেরই হায়েযের নিম্নতম মুদ্দত তিনদিন তিনরাত এবং উর্ধ্বতম দশদিন দশরাত। (হেদায়া, আল হিন্দি)
দু হায়েযের মধ্যবর্তী পবিত্র অবস্থার নিম্নতম মুদ্দত পনের দিন ঊর্ধ্বতম মুদ্দতের কোন নিদিষ্ট সীমা নেই। দু'হায়েযের এ মধ্যবর্তী সময়কে 'তুহুর' বলে। হায়েযের রক্তের রং সাধারণতঃ লাল, কালো, ধূসর, হলুদ, সবুজ, দুমল মোট এ ছয় প্রকার হয়ে থাকে। হায়েযের সময় নারীদের প্রতি নামায ও রোযা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঐ নামাযের কাজাও করতে হয় না, কিন্তু পরে ঐ রোযার কাযা আদায় করতে হয়।
হায়েযের কতিপয় মাসায়েল
১। যাদের প্রতি মাসে হায়েযের নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে, যথাঃ চারদিন, পাঁচদিন, ছয়দিন ইত্যাদি। তাদের ঐ মুদ্দত অতিক্রম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে (অবশ্য রক্তস্রাবও বন্ধ হওয়া চাই) ওযু গোসল করে নামায আদায় করতে হবে।২। যাদের হায়েযের সময় সীমা বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন রকম; যেমন কোন মাসে চারদিন কোন মাসে ছয়দিন,
এভাবে, তারা যে মাসে যতদিন রক্ত দেখবে ততদিন হায়েযকাল মনে করে নামায, রোজা, স্বামী সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু এভাবে অভ্যস্থ রমনীগণ যদি কোন মাসে দশদিনের বেশি রক্ত দেখে, তবে পূর্বের মাসে যে কয়দিন হায়েয ছিল, এ মাসেও ঠিক সেই কয়দিন হায়েযকাল ধরে বাকী দিনগুলো এস্তেহাযা মনে করবে।
৩। কোন নারী তিনদিন হায়েয হয়ে মাঝে পনেরদিন ভাল থাকার পর আবার তিনদিন রক্তস্রাব হলে আগে পিছনের উভয় তিনদিনকেই (মোট ছয়দিন) হায়েয হিসাবে ধরিবে এবং মধ্যবর্তী পনের দিনকে তুহুরকাল মনে করবে।
৪। কোন রমণীর প্রতি মাসে হায়েযের নির্দিষ্ট সময় সীমা বর্ধিত হয়ে পাঁচ, ছয় কিংবা সাতদিনে পৌছলে ঐ সম্পূর্ণ দিনগুলোকেই হায়েযকাল ধরতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, তার হায়েযের সময় সীমা পরিবর্তিত (বর্ধিত) হয়েছে। কিন্তু এরূপ নির্দিষ্ট মুদ্দত হায়েযওয়ালী কোন নারীর অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে যদি একাধারে দশ দিনের বেশি রক্ত থাকে, তবে সে পূর্বের নির্দিষ্ট মুদ্দতকাল হায়েয ধরবে এবং বাকি দিনগুলোকে এস্তেহাযা মনে করবে।
৫। হায়েযের নূন্যতম সময় সীমা তিনদিনের মধ্যে অল্প কিছু সময় রক্তস্রাবকেও হায়েয বলা যাবে না; বরং এটাকে এস্তেহাযা ধরে নিবে।
৬। কোন নারীর প্রতি মাসের প্রথম তিনদিন রক্তস্রাব হয়। হঠাৎ এক মাসে তার প্রথমদিন রক্ত দেখা দিয়ে একাধারে চৌদ্দ দিন বন্ধ থাকলো। তার পরদিন একদিন রক্ত দেখা দিল এক্ষেত্রে উক্ত রমণী ঐ উভয় দিনকে হায়েয ধরে এবং তার সাথে আর একদিন মিলিয়ে নিয়ে মোট তিনদিন হায়েয ধরবে।
৭। হায়েযের সময় পূর্বে বর্ণিত ছয়টি বর্ণের যে কোন বর্ণের রক্তস্রাব দেখলে, তাকে হায়েয মনে করবে।
নিফাসের বর্ণনা ও নিফাসের কতিপয় মাসায়েল
মহিলাদের সন্তান প্রসব অথবা গর্ভপাতের পরে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে নিফাস বসে। নিফাসের নিম্নতম মুদ্দতের কোন সময় সীমা নেই; যেহেতু সেটা যে কোন সময় এমন কি দু-এক ঘণ্টা হয়েও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর উর্ধ্বতম সময় সীমা চল্লিশ দিন। অর্থাৎ চল্লিশ দিনের মধ্যে রক্তস্রাব দেখা দিলে তাকে নিফাসের রক্তই মনে করতে হবে। কিন্তু চল্লিশ দিনের অধিককাল রক্তস্রাব দেখা দিলে তাকে এস্তেহাযা মনে করতে হবে। নিফাস বন্ধ হওয়া মাত্র ওযু-গোসল করতঃ নামায আদায় করবে। নিফাস সম্পর্কে শরীয়তের বিধি-নিষেধ অবিকল হায়েযেরই মত।নিফাসের কতিপয় মাসায়েল
১। যেসব নারীর নিফাসের কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই, অর্থাৎ কোনবার পনেরদিন, কোনবার ত্রিশদিন, এভাবে নিফাস হয়, এ প্রকার নারীগণ উর্ধ্ব চল্লিশ দিন পর্যন্ত যতবার যতদিন রক্ত দেখবে, ততবার ঠিক ততদিনই নিফাস ধরে নিয়ে।২। যাদের নিফাসকালের একটা নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে, অর্থাৎ প্রতিবার সন্তান প্রসবের পরে পনেরদিন নিফাস হয়; কিন্তু একবার হঠাৎ রক্তস্রাব শুরু হয়ে চল্লিশ দিন অতিক্রম করে গেল। এ হালতে পূর্বের সেই নির্দিষ্ট পনের দিন নেফাসকাল ধরে বাকি দিনগুলোর রক্তস্রাবকে এস্তেহাযা ধরে নিবে।
৩। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব না হয় যদি গর্ভপাত হয়ে অথবা কোন নারীর সন্তানের হাত-পা বা একটি মাংসপিণ্ডের মত প্রসব হয়, তবে তাতে যে রক্তস্রাব হবে, তাও নিফাসরূপে গণ্য হবে।
হায়েয নিফাসকালে নিষিদ্ধ কাজসমূহ
১। নামায পড়া যাবে না।২। রোযা রাখা যাবে না।
৩। কুরআন তিলাওয়াত করবে না। অবশ্য পৃথকভাবে শব্দ বানান করা যাবে। আর প্রার্থনা বা দোয়ার নিয়তে মুনাজাতের আয়াতও পড়তে পারবে।
৪। মুনাজাতের নিয়ত ছাড়া কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করা যাবে না।
৫। তিলাওয়াতে সিজদাহ করা যাবে না।
৬। খোদার ঘর তাওয়াফ করা যাবে না।
৭। কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা যাবে না।
৮। মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
৯। কুরআন মাজিদের কোন কালাম বা আয়াতাদি লিখিত কাগজ স্পর্শ করা যাবে না।
১০। স্বামী সহবাস করা যাবে না (অবশ্য স্বামীর সঙ্গে একত্রে শয়ন-ভোজনে কোন ক্ষতি নেই)। হায়েয-নিফাসের সময় স্ত্রীকে চুম্বনাদি করা নাজায়েয নয়, তবে তার নাভীন্থল হতে হাঁটু পর্যন্ত স্পর্শ করা মাকরূহ তাহরীমী।
১১। হায়েয নিফাসের সময় সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে বিনা গোসলে সহবাস করা জায়েয নেই; তবে তা বন্ধ হওয়ার পরে একটি নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর গোসল ছাড়াও স্বামী সবহাস করা বৈধ।
১২। যদি কোন নারীর হায়েযের নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে; যেমন- প্রতি মাসে ছয়দিন হায়েয হতো; কিন্তুএক মাসে হঠাৎ পাঁচদিন পরে হায়েয বন্ধ হয়ে গেল। এরূপ অবস্থায় হায়েযের ঊর্ধ্বতম সময় সীমা দশদিন অপেক্ষা না করে সহবাস করবে না। কারণ কোন কারণবশতঃ সাময়িকভাবেও স্রাব হতে পারে অথবা, হয়তো তার হায়েযের পূর্ববর্তী নির্দিষ্ট সময় সীমারও পরিবর্তন ঘটতে পারে। এটা দ্রুত বোঝা সম্ভব নয়। এজন্যই দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
১৩। কারো নফল নামাযের মধ্যে হায়েয শুরু হয়ে গেলে নামায ছেড়ে দেবে; কিন্তু হায়েয বন্ধ হওয়ার পরে উহার কাযা আদায় করতে হবে। তবে ফরজ নামাযের মধ্যে এরূপ অবস্থা হলে তাও ছেড়ে দেবে; কিন্তু পরে তার কাযা আদায় করতে হবে না।
১৪। কারো যদি হায়েযের দশম দিনে কোন নামাযের ওয়াক্তের এমন সময় হায়েয বন্ধ হয় যে, ঐ ওয়াক্তের মধ্যে গোসল করতঃ পবিত্র হয়ে 'আল্লাহু আকবার' পর্যন্ত বলার সময় পাওয়া যায়, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায ঐভাবেই আদায় করতে হবে। না করলে পরে তার কাযা আদায় করতে হবে।
শেষ কথা ➡️ আমাদের এই পোস্টে আপনাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি থেকে শুরু করে পবিত্রতা সম্পর্কে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনি এই সব তথ্য অনুসরণ করে পবিত্র থাকতে পারবেন। আপনার মতামত এবং প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত মূল্যবান এবং আমরা সব সময় তাদের স্বাগত জানাই। এই রকম আরো পোস্ট চাইলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। আবার আপনার সাথে দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে। ধন্যবাদ।
আমার জীবন বিডিতে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url